রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৪৮)

  • Update Time : শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ১২.১২ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল
 লবণ

তৃতীয় অধ্যায়

১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দে মেদিনীপুরের ঠিকা মালঙ্গীরা ১০০ মণের পিছনে ফাউ হিসাবে ২৫ মণ ধরে মোট ১২৫ মণ লবণের জন্য পেত ৪০ আর্কট টাকা। অবশ্য মেদিনীপুরের হিজলী পরগণার মালঙ্গীরা আরও বেশি পাচ্ছে-১২৫ মণের দাম ৬০ আর্কট টাকা। সুন্দরবন এলাকার মাহিন্দাররা মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে আবেদন করছে। নদীয়া জেলাশাসক মাহিন্দারদের আবেদনপত্র Board of Rev. এর কাছে বিবেচনার জন্য পাঠাচ্ছেন। বালান্দা পরগনার সারাবসিয়া, ভাসিলিয়া রানিগাছি গ্রামের ২৪ জন শ্রমিক আবেদন করছে কয়েদীদের জেলখানার খাদ্যের জন্য বরাদ্দ অর্থের ১/৪ অংশও তারা মজুরি পাচ্ছে না, এমনকী একজন সাধারণ কুলি যা আয় করে তার ১/৮ অংশও এরা মজুরি হিসাবে পাচ্ছে না।
এই আবেদন পত্রে এরা নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৭/৮ মাস যে অর্থ প্রতিমাসে পেয়েছে তার উল্লেখ করছে। এই কয়মাস মিলে এদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি আয় করেছে তারা ৪=০০ টাকা পেয়েছে। সবচেয়ে যে কম কাজ করেছে সে পেয়েছে ১টাকা ৮ আনা। এর ফলে গড় আয় দাঁড়াল ২-৬-০ আনা। মাসিক বেতনের পরিবর্তে কতটা লবণ তৈরি করল তার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারিত হত।
লবণ এজেন্সির অফিসাররা বেতন ছাড়াও লাভের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ১০% কমিশন সে যুগে কোম্পানির কাছ থেকে পেত। তাই কমিশনের টোপ তাদেরকে অধিক উৎপাদনে উৎসাহিত করত এবং মাহিন্দারদের ওপর অত্যাচার চালাতে এরা পিছপাও হত না। অবশ্য মালঙ্গীদের এই অগ্রিম দেবার ব্যবস্থা কোম্পানি আমাদের দেশে প্রথম চালু করেনি। ব্রিটিশ পূর্বযুগে মোগল আমলে এটা ছিল এবং কোম্পানি এই দাদনি ব্যবস্থাকে তার রাজত্বে সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিল।
মাহিন্দাররা লবণ উৎপাদন এলাকা ছেড়ে প্রতিনিয়ত পালিয়ে যাচ্ছে-মালঙ্গীরা এ অভিযোগ করছে। লবণ এজেন্সির লোকরা পাইকদের নিয়ে এসব লোকদের ধরার চেষ্টা করছে এধরনের ঘটনা প্রায়ই অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে রায়মঙ্গল সল্ট এজেন্সিতে লক্ষ করা যাচ্ছে। ১৮১১ খ্রীষ্টাব্দে বাখরগঞ্জ জেলায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়। ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দে জানা যাচ্ছে ৩৫০টি পরিবার লবণ উৎপাদন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমন ধান ওঠে ডিসেম্বর-এর শুরুতে। অপরদিকে নভেম্বরের মধ্যে মাহিন্দারদের লবণ তৈরির কাজে নিয়োজিত হতে হয়। ফলে এ সময়ে শ্রমিকের অভাবে আমন কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এখবরও জানা যাচ্ছে। (২৩)
যশোরের কলরোয়া বাকলার চাষিরা অভিযোগ করছে ২১টা গ্রামের ১৫০ জন চাষিকে জোর করে লবণের জন্য নিয়ে গেছে মালঙ্গীরা। বুড়ন পরগনায় (বর্তমানে সাতক্ষীরা) সে সময় অনেকগুলি লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র ছিল। সেখানে অনেক মাহিন্দার লাগানোর ফলে এ পরগনার আমন ধান কাটার অসুবিধা হচ্ছে- এ ধরনের অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসার ফলে কোম্পানির পক্ষে লর্ড কর্নআলিস ১৭৮৮ খ্রীষ্টাব্দে ঘোষণা করলেন মাহিন্দারদের জোর করে নিয়ে যাওয়া যাবে না- তারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে যাবে। সল্ট এজেন্টরা লবণ শ্রমিকদের রক্ষাকর্তা হিসাবে কাজ করবে- দাসের মতো তাদের নিয়োগ করা যাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024