বাজান চলিয়া গেলে কে যেন মায়ের সমস্ত মুখে কালি লেপিয়া দিয়া গেল। মায়ের মুখে সেই ছোট্ট মেয়েটির মতো হাসিখুশি আর দেখিতে পাই না। নানিও এ-কাজ ও-কাজ ফেলিয়া মা’র কাছে আসিয়া বসেন। মায়ের সদ্য-বাঁধা মাথার খোঁপাটি খুলিয়া আবার নতুন করিয়া বাঁধিয়া দেন। পরদিন মায়ের যত জামা, কাপড়, কাঁথা, বালিশের ওয়ার, সমস্ত সোডা দিয়া সিদ্ধ করিয়া নানি ধুইয়া দিলেন। নানা মায়ের জন্য হাট হইতে একখানা নূতন কাপড় কিনিয়া আনিলেন। আমার জন্য নূতন ছিটের জামা। সেই নূতন শাড়ি পরিয়া মা আবার পাড়া বেড়াইতে বাহির হইলেন।
মায়ের পরনে সেই নূতন শাড়ির গন্ধ আমার কাছে কেমন করুণ লাগে। আজ আর কোনো বাড়িতেই হাসিখুশি জমিল না। সবাই মাকে যেন চির-জনমের মতো বিদায় দিতেছে। বুঝিতে পারিতেছি মা বহু কষ্টে চোখের পানি বন্ধ করিতেছেন। সেই ফেলিদের বাড়ি, মিঞাজানের বাড়ি, বরোইদের বাড়ি তারপর মা চলিলেন গরীবুল্লা মাতবরের বাড়ি। মাতবরের বউ যেন হিন্দুপাড়ার একখানা প্রতিমা, এমন সুন্দর দেখিতে। মাকে তিনি কত আদর করিয়া বসাইলেন। মায়ের মাথার চুল খসাইয়া তেল মাথাইয়া দিয়া আবার পরিপাটি করিয়া বাঁধিতে বাঁধিতে বলিলেন, “এত তাড়াতাড়িই যদি যাইবি তবে আসিলি কেন?
তোকে ভালোমতো করিয়া সামনে বসাইয়া দেখিলামও না। ও রাঙাছুটু। কাল তুই আমার এখানে খাইবি। বল্ কোন পিঠা তোর খাইতে ইচ্ছা করে?” মা বলিলেন, “আমি তো পরশুই যাইব। ওর নানি কি আমাকে এখানে খাইতে দিবে? আজই তো পিঠা তৈরির জন্য মা চাল কুটিতেছেন।”
মাতবরের মেয়েটি মায়ের সমবয়সী। এমন সুন্দর দেখিতে যেন হলদে পাখিটি। মার গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলে, “না রাঙা-বুবু। তুমি না করিও না। আমি যেমন করিয়াই হোক চাচির কাছে বলিয়া তোমাকে আমাদের বাড়িতে কাল খাওয়াইব।”
Leave a Reply