তুপিককে ব্ল্যাকবোর্ডে ডেকে মালিনোভস্কি বললেন, ‘বহৃত আচ্ছা, ছোকরা, বলো তো, তুমি কোন্ ফ্রন্টে পালানোর মতলব করেছিলে? জাপান ফ্রন্টে কি?’
গলায় বিষ ঢেলে মালিনোক্ষি বললেন, ‘ও, তাই বুঝি? তা জানতে পারি কি, কোন শয়তান তোমায় নাকে দড়ি দিয়ে নিজনি নভগরোদ টেনে নিয়ে যাচ্ছিল? তোমার মাথাটাই বা কোথায়, আর আমার দেয়া ভূগোলের শিক্ষাই বা কোথায় জমা রেখেছ শুনি? এটা কি একদম জলের মতো সোজা নয় যে জার্মান ফ্রন্টে যাওয়াই যদি তোমার বাসনা ছিল তাহলে তোমার যাওয়ার কথা মস্কো হয়ে, স্মোলেনষ্ক আর রেস্ত হয়ে?’ এ-সময়ে হাতের ছড়িটা ম্যাপের গায়ে চেপে ধরে ধরে দেখাতে লাগলেন মালিনোস্ক।
‘আর তুমি কিনা হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে চলে গেলে পুবে, একেবারে উলটো মুখে। ভুল পথে গেলে কেন, কী জন্যে, শুনি? তোমাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি এই জন্যেই তো যে তুমি যা শিখছ তা হাতে-কলমে কাজে লাগাতে পারবে। নাকি, শেখাচ্ছি বিদ্যেটাকে মাথার ওই ডাস্টবিনে জমা করে রাখবে বলে? বোসো। খুব খারাপ নম্বর দিচ্ছি তোমায়। ছোকরা, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত!’
এখানে বলা দরকার যে, মাস্টারমশাইয়ের এই কথাগুলো শুনে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রদের সেই প্রথম মাথায় ঢুকল, পড়াশুনো করার আসল দরকারটা কী জন্যে। দেখা গেল, তারা হঠাৎ অসম্ভব উৎসাহ নিয়ে ভূগোল পড়তে শুরু করে দিয়েছে। এমন কি তারা ‘ঘরপালানে’ নামে একটা নতুন খেলা পর্যন্ত আবিষ্কার করে ফেললে।
খেলাটা ছিল এইরকম: একটি ছেলে সীমান্তের যে-কোনো একটি শহরের নাম করবে, আরেক জন সঙ্গে সঙ্গে ওই শহরে যাওয়ার পথে বড় বড় জায়গাগুলোর নাম করে যাবে। ঘরপালানে, অর্থাৎ দ্বিতীয় ছেলেটি, যদি এ-খেলায় ভুল করত তাকে তবে খেসারত দিতে হত। আর খেসারত না দিলে খেলার শর্ত-অনুযায়ী হয় মাথায় এক গাঁট্রা আর নয়তো নাকে এক ঠোনা হজম করতে হত।
Leave a Reply