তৃতীয় পরিচ্ছেদ
মা আমার কান্ড দেখে এত রেগে গিয়েছিলেন যে বিছানা থেকে নেমে এসে আলো নিবিয়ে দিয়েছিলেন। মার ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত আমি খানিক ঘাপটি মেরে রইলুম, তারপর যিশুর মূর্তির নিচে জালিয়ে-রাখা ছোট্ট বাতিটা নিয়ে ফের পড়া শুরু করলুম।’
একদিন গুজব রটল, অস্ট্রিয়ান যুদ্ধবন্দীদের আমাদের রেল-স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে। শুনে ইশকুল ছুটির পর ফেক্কা আর আমি ছুটলুম সেখানে। স্টেশনটা ছিল শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে। সেখানে যেতে হলে লম্বা ছুট লাগিয়ে কবরখানার পথ ধরে, শহরতলীর জঙ্গল পেরিয়ে পাকা রাস্তায় এসে উঠতে হত, তারপর একটা লম্বা আঁকাবাঁকা খাদও পেরোতে হত।
‘আচ্ছা, ফেক্কা, তোর কী মনে হয়, যুদ্ধবন্দীদের কি শেকল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে?’
‘কে জানে, হতেও পারে। হলে আশ্চায্য হব না। নইলে ওরা তো লম্বা দেবে। তবে শেকল-বাঁধা থাকলে বেশি দূর দৌড়নো যায় না। জেলখানার কয়েদীদের দেখিস, তারা কোনোরকমে পা টেনে চলতে পারে, তার বেশি না।’
‘কিন্তু তারা তো কয়েদী, চোর-ছ্যাঁচোড় চুরি করে নি।’ যুদ্ধবন্দীরা তো আর কারো কিছু ফেদুকা আমার দিকে কড়া চোখে তাকাল এবার।
‘তুই কি ভাবিস বল তো? মনে করিস লোকে জেলে যায় শুধু চুরি করে আর খুন-খারাপি করে? কত কারণে যে লোকে জেল খাটে তার কিছু ঠিক-ঠিকানা আছে নাকি?’
‘আর কী কী কারণে রে?’
‘হাঁ, বুঝলি, আচ্ছা, আমাদের হাতের কাজ শেখাতেন যিনি সেই মাস্টারমশাই জেল খাটছেন কেন বল্ দেখি? জানিস না তো? ঠিক ওই কারণে।’
Leave a Reply