নিজস্ব প্রতিবেদক
কবি আল মাহমুদ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। সমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম এই কবি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
পাশ্চাত্য আধুনিকতা ব্যতিরেকে আমরা যখন কথাই বলতে পারি না কিংবা আমাদের আধুনিক কবিতায় বিদেশি শিল্পের চাষবাস, জনসমর্থনেও সেদিকটা ভারি, তখনও এই কবিকে মাটির সঙ্গে, নদীর সঙ্গে, ফুল ও পাখির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। হয়তো বিরোধের চোরাটান তখনি প্রত্নফসিল হয়ে জমা হচ্ছিলো কবির অন্তরে। আর কবিতা তো স্বয়ম্ভূ, সত্তার গভীর টানে ভেতরে আসীন।
জীবনানন্দ দাশের পর বাংলা কবিতায় এ বঙ্গের উপস্থিতি সুস্পষ্ট নয়। আল মাহমুদের কবিতায় আছে দেশপ্রেম, সমাজ, পরিবার, ঐতিহ্য, ধর্ম ইত্যাদির যুক্ততা। চির পরিবেশ থেকে নিয়ে তিনি শব্দ ব্যবহার করেছেন। ‘সোনালী কাবিন’, ‘কালের কলস’, ‘লোক লোকান্তরে’র কবি হয়ে উঠেছেন অনন্য কাব্যদ্রষ্টা।
২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে ঢাকায় ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবি আল মাহমুদ চেয়েছিলেন শুক্রবার দিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। অবশেষে তার ইচ্ছই পূর্ণ হয়। সেদিন ছিল শুক্রবার। সেদিন রাত ১১টা ৫ মিনিটে এই পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান কবি।
তার পিতার নাম মীর আবদুর রব এবং মাতার নাম রওশন আরা মীর। বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাইস্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু হাইস্কুলের পড়াশোনা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু।
কবিতার বচন অন্তর দিয়ে আহরণ করতে হয়। আল মাহমুদ পাঠ যেন সে-কথাই পলে পলে স্মরণ করিয়ে দেয়। কবিতার বাস অধরা লোকে, যাকে ‘অলৌকিক আনন্দ’ বলা যায়।
আল মাহমুদের এরকম অসংখ্য লাইনের বিদ্যুৎ-চমকে আমরা মুহূর্তে আবিষ্ট হই। তারপর কবিতার পঙক্তিগুলো যেন অন্তরে নিরবধি খেলা করে যায়।
আজ তার ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সারাক্ষনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি লেখা প্রকাশ করা হলো।
কবিতা এমন – আল মাহমুদ
কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন
আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া–
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!
কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী
কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন
পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ
মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠানে ছড়ানো জাল আর
বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।
কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর
ইস্কুল পালানো সভা, স্বাধীনতা, মিছিল, নিশান
চতুর্দিকে হতবাক দাঙ্গার আগুনে
নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা অগ্রজের কাতর বর্ণনা।
কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম, গন্ধভরা ঘাস
ম্লান মুখ বউটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর
গোপন চিঠির প্যাডে নীল খামে সাজানো অক্ষর
কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।
Leave a Reply