শ্রী নিখিলনাথ রায়
সেই সময়ে ভারতের চতুদ্দিকে ঘোর রাজনৈতিক বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল। কিন্তু বাঙ্গলারাজ্য তৎকালে কাৰ্য্যদক্ষ নবাবাগ্রণী মুর্শিদকুলীর তর্জনীতাড়নে স্থিরভাবে শাসিত হইতেছিল। মুর্শিদকুলীর রাজস্ববন্দোবস্ত বাঙ্গলার ইতিহাসের একটি সর্ব্বপ্রধান ঘটনা। তাঁহার রাজস্বকার্য্যের জ্ঞান ও দক্ষতা, তৎকালে বাঙ্গলারাজ্যে প্রবাদবাক্যের ন্যায় প্রচলিত হইয়াছিল এবং সকলেই তৎকালে মুর্শিদকুলীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যুৎপত্তি দেখাইতে চেষ্টা পাইতেন।
মহারাজ নন্দকুমারের পিতা পদ্মনাভও রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন এবং পুত্র নন্দকুমারকেও বাল্যকাল হইতে সেই বিষয়ে শিক্ষিত হওয়ার জন্য সর্ব্বদা যত্ন করিতে বুদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ছিল। বলিতেন। বাল্যকাল হইতে নন্দকুমারের তিনিও পিতার ন্যায় রাজস্ববিষয়ে জ্ঞান লাভ করিতে লাগিলেন।
পদ্মনাভের রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা থাকায়, তিনি সরকারের কার্য্যে নিযুক্ত হন। ক্রমে ক্রমে তিনি আমী- নের কার্য্যে নিযুক্ত হইয়া ফতে সিংহ, ঘোড়াঘাট ও সাতসইকা পরগণার রাজস্ব সংগ্রহের ভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। মুর্শিদকুলী খাঁ অনেক জমী- দারের, হস্ত হইতে জমিদারী গ্রহণ করিয়া তৎসমুদায়ের রাজস্বসংগ্ৰহার্থ কতকগুলি আমীন নিযুক্ত করেন। যদিও পরিশেষে তিনি ও তাঁহার পরবর্তী নবাবগণ জমিদারদিগের মধ্যে অনেককে নিজ নিজ জমিদারী প্রত্যর্পণ করিয়াছিলেন, তথাপি আমীনী পদের একেবারে লোপ হয় নাই।
পদ্মনাভ মুর্শিদকুলী কিংবা তাঁহার পরবর্তী কোন্ নবাবের সময়ে উক্ত পরগণাত্রয়ের আমীনী পদে প্রথম নিযুক্ত হইয়াছিল তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। উক্ত পরগণাত্রর হইতে ১৪ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় করিতে হইত। ফতেসিংহ এক্ষণে মুর্শিদাবাদ জেলায় রহিয়াছে; কিন্তু ঘোড়াঘাট রঙ্গপুরের ও সাতসইকা বর্দ্ধমানের অন্তর্ভূত হইয়াছে। পদ্মনাভ রাজস্বসংগ্রহ কার্য্যের সহায়তার জন্য পুত্র নন্দকুমারকে নিজের নায়েব বা সহকারী নিযুক্ত করেন।
Leave a Reply