শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিছু কাল পরে লহরীমাল অকৃতজ্ঞভাবে হুগলী বন্দরের শুল্ক ফৌজদারের হস্ত হইতে পৃথক্ করিয়া লন। ইহাতে ইয়ার বেগ তাঁহার প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া অপর কোন ব্যক্তিকে দেওয়ানীপদ প্রদান করিতে ইচ্ছা করেন এবং সাদেক উল্লার অনুরোধে অবশেষে নন্দকুমারকে হুগলীর দেওয়ানীপদ প্রদান করিয়াছিলেন। ইহার পর হইতে ক্রমে ক্রমে নন্দকুমারের ভাগ্যোদয় হইতে আরম্ভ হয় এবং তদবধি তিনি দেওয়ান নন্দকুমার নামে অভিহিত হইতে থাকেন।
নন্দকুমার সর্ব্বদা দক্ষতার সহিত কার্য্য করিয়া ইয়ার বেগকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট্র রাখিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইয়ার বেগের ভাগ্যে অধিক দিন হুগলীর ফৌজদারীপদে প্রতিষ্ঠিত থাকা ঘটিয়া, উঠে নাই; তিন বৎসর পরে তিনি কোন কারণে পদচ্যুত হইয়া স্বীয় দেওয়ান নন্দকুমারকে লইয়া সমস্ত নিকাস বুঝাইয়া দিবার জন্য মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তাঁহার নিকাসাদি বুঝাইতে এক বৎসর সময় লাগিয়াছিল। ইতিমধ্যে সর্বজনপ্রিয় নবাব আলিবর্দী খাঁ মহবৎ জঙ্গের মৃত্যু হইল এবং নবাব সিরাজ উদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার মসনদে উপবিষ্ট হইলেন।
সিরাজ যৎকালে কলিকাতায় ইংরেজদিগকে দমন করিয়া, তাঁহাদের দুরভিসন্ধি বিশেষ রূপে বুঝিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তৎকালে হুগলীতে কোন ফৌজদার ছিল না। ইয়ারবেগ মুর্শিদাবাদে নিকাস দিতে ব্যস্ত ছিলেন; এরূপ সময়ে পাছে ইংরেজেরা কোনরূপে আবার বাঙ্গলার প্রবিষ্ট হন, সেই জন্য তিনি মাণিকচাঁদকে কলিকাতায় ও মির্জা মহম্মদ আলিকে হুগলীর ফৌজদার পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন।
উক্ত মির্জা মহম্মদআলির দ্বারা হুগলীর ন্যায় প্রসিদ্ধ বন্দরের শাসন কার্য্য সুচারু- রূপে সম্পন্ন হওয়া কঠিন মনে করিয়া, তিনি শেখ ওমার উল্লাকে হুগলীর ফৌজদারী প্রদান করেন। নন্দকুমার সেই সময়ে মুর্শিদাবাদে ইয়ার- বেগের হিসাব নিকাসাদি বুঝাইতেছিলেন। তিনি হুগলীর দেওয়ানীর জন্য আবেদন করিলে, তাঁহার আবেদন গ্রাহ্য হইল। কারণ তৎকালে তাঁহার ন্যায় চতুর ও কার্য্যদক্ষ জনৈক লোকের বিশেষ প্রয়োজন হইয়া উঠিয়াছিল এবং পূর্ব্বে দেওয়ানী কার্য্য করায়, তাঁহার উক্ত কার্য্যে বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল; এজন্য তিনি পুনর্ব্বার ওমার উল্লার দেওয়ানীপদে নিযুক্ত হইলেন।
Leave a Reply