তৃতীয় অধ্যায়
লবণের দাম বিভিন্ন সময়ে বাড়ানো হলেও প্রাথমিক উৎপাদকদের মজুরি বাড়েনি। গরিব মানুষদের বাধ্য করা হয়েছে সামান্য মজুরিতে লবণ উৎপাদন করতে। লবণ তৈরির জন্য সুন্দরবনের সাজুনিয়ারা ১৮৪০ খ্রীষ্টাব্দে দাবি জানাচ্ছে প্রতিমণ এর জন্য ৮১/ আনা দিতে হবে। অবশ্য এই হারে মেদিনীপুরে দেওয়া হত। মেদিনীপুরে ১০০ মণ লবণের পারিশ্রমিক হিসাবে সাজুনিয়াকে দেওয়া হত ৫০ টাকা।
এই টাকা থেকে ১৫/১৬ টাকা মজুরি হিসাবে দেওয়া হত এর সঙ্গে জ্বালানির কাঠ, মাটির পাত্র, রায়ত চাষির জমির সেলামি সব মিলিয়ে ৪৬/৪৭ টাকা চলে যেত। মালঙ্গীরা লাভ হিসাবে ১০০ মণ পিছু ৭/৮ টাকা পেত। এসময়ে লবণের পাইকারি দর ছিল ১০০ মণের জন্য ৪০০ টাকা। সুতরাং বোঝা সহজ ১০০ মণ লবণের ব্যবসায় সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে সরকারের রাজস্ব হিসাবে আয় হত প্রায় ৩০০ টাকা।
অনেক জমিদার তাদের এলাকায় লবণ বিক্রয়ের জন্য সরকারের কাছ থেকে ডিলার হবার অনুমতি লাভ করেছিল। সরকারি রেট অমান্য করে চাষিদের কাছে বেশি দামে লবণ বিক্রয় করা হত। টাকীর জমিদার শ্রীনাথ মুন্সির কনিষ্ঠ পুত্র কৃষ্ণনাথ চৌধুরির লবণের হোলসেল লাইসেন্স ছিল। তিনি তার প্রজাদের বাধ্য করতেন সরকারি রেটের অতিরিক্ত দামে তার মাল কিনতে।
১৮৫৭ এর ২৩ শে অক্টোবর বারুইপুর লবণ চৌকিগুলির সুপার অভিযোগ করছে- ঐ এলাকার জমিদার মিঃ ফ্রেজার, লবণের ডিলারশিপে বে-আইনিভাবে প্রজাদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। রাজারহাট লবণ চৌকির অধীনস্থ জমিদার প্যারীলাল মণ্ডলের পুত্র রাধামোহন মণ্ডল বেনামে লবণের ভেন্ডার হয়ে প্রজাদের কাছ থেকে ইচ্ছামত দাম আদায় করছে।
-১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে বে-আইনি লবণ প্রস্তুতের ঘটনা কমছে। ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্নস্থানে সরকারি কর্মচারি নিয়োগের মধ্য দিয়ে লবণ বাণিজ্যে কিছুটা শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছেন। বাখরগঞ্জ থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় একশত চৌকিতে লবণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কর্মচারীরা থাকত। এ সময়কার বিভিন্ন রিপোর্টে বে-আইনি লবণ তৈরির প্রবণতা কমছে তার উল্লেখ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ফলে লবণের সরকারি বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ছে। বারুইপুরের সল্ট সুপারের হিসাবে জানা যাচ্ছে এই এলাকার চৌকিগুলিতে ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে উৎপাদন হচ্ছে ৪ লক্ষ মণ। সেই সঙ্গে বিক্রয়ের পরিমাণ প্রতি বছর বেড়ে চলেছে।
১৮৪৮ …………৪৯……….১০৯৪০৬ মণ
১৮৫১ …………৫২………..১১৩০৭১ মণ
১৮৫৩…………৫৪………..১২০৯৯৬ মণ
Leave a Reply