বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৬০)

  • Update Time : শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল
নীল

তৃতীয় অধ্যায়

রামমোহন দ্বারকানাথ প্রমুখ নব্য বাংলার নেতারা ১৮২৯ এর ১৫ই ডিসেম্বর টাউনহলের সভায় নীলচাষ সমর্থন করেছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন নীলচাষহীন এলাকার তুলনায় নীলচাষের এলাকার চাষিদের আর্থিক অবস্থা ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীলচাষের ফলে কৃষকরা উপকৃত হয়েছে। সে যুগটা ছিল দেভিড হেয়ার বেথুনের যুগ-বড় ইংরেজ-এর উদারতার কথা ভেবে আশ্বস্ত হয়েছিলেন নব্য বাংলা।

অগ্রপথিকরা কিন্তু শীঘ্রই তাদের সেই ঘোর কাটল। অবশ্য নীলকর সাহেবদের প্রজাহিতৈষণার ব্যাপারে যে দাবি সে যুগে করা হয়েছিল তা সবটা মেনে না নিলেও কিছু কিছু ব্যাপারে তাদের জনকল্যাণমূলক দিককে অস্বীকার করা যায় না। জমিদারদের তুঘলকি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেছিল এবং অনাবৃষ্টি বা দুর্যোগের দিনে চাষিকে কিছু কিছু কিছু বি সাহায্য করার সংবাদ জানা যায়।

মুন্সিগঞ্জের Thomas Levi এবং ঢাকার Pagosee স্থানীয় মানুষদের কাছে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছিলেন। কোনও রকমের অত্যাচারের সঙ্গে এরা জড়িত ছিলেন না। ঝিঙেরগাছার ম্যাকেঞ্জি সাহেব নিজে অত্যাচারী হলেও Baptist Missionery Society এর পক্ষে দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। ১৩০ ছাত্র নিয়ে একটা ইংরেজি স্কুল চালু করেন। যশোরের মাগুরা মহকুমায় নীলকর সাহেবরা দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ে তুলেছিলেন।

রুদ্রপুর নীল কনসার্ন-এ অধিকর্তা ডেভিডসন বাদুড়িয়া এল. এম. এস. বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নীল বিদ্রোহে নীলকর সাহেবদের নেতৃত্ব দেন James Farlong কিন্তু ১৮৪২ খ্রীঃ ফার্লং দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং দুটি স্কুলও প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য করেন। এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়, সেদিন তারা সমাজজীবনে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল দাতব্য চিকিৎসালয়ের বিনামূল্যের ঔষধ তা দূর করতে পারে না।

ব্রিটিশ বণিকরা নিজের দেশের ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ভূমিকা নিলেও উপনিবেশের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে পারে না- এটা আমরা সেদিন বুঝতে পারিনি-এই ভুল পরবর্তীকালে জাতীয় জীবনে বিষবৃক্ষের সৃষ্টি করল-১৮৫০ এর মধ্যে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সামনে তা ধীরে ধীরে উদ্‌ঘাটিত হল। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের শিল্পসাম্রাজ্য মুখ থুবড়ে পড়ল কার টেগোর কোম্পানির পতন ঘটল। এ কেবল একজন ব্যক্তি বা তার পরিবারের আর্থিক বুনিয়াদে ফাটল ধরা নয়- একটা জাতির সমগ্র আশা-আকাঙক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ল। আমাদের দেশের আদার ব্যাপারীরা জাহাজের খবর রাখতে গিয়ে Partner in Empire হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু উপনিবেশের বিরুদ্ধ পরিবেশে তা সম্ভব নয়-এটা বাস্তব হয়ে উঠল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024