তৃতীয় অধ্যায়
মোল্লাহাটির কুঠির ফারলং লারমুরের বেঙ্গল ইন্ডিগো কোম্পানির ৫৯৫টি গ্রামের জমিদারি ছিল এবং তার জন্য এই কোম্পানি ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খাজনা দিত। কোম্পানির ঘরবাড়ি ইত্যাদি সম্পত্তির মূল্য সে যুগে ছিল ৫০ লক্ষ টাকা এবং কেবলমাত্র নদীয়া জেলাতেই তাদের প্রতি বছর ১৮ লক্ষ টাকা মূলধন খাটত।
নীলচাষ দুভাবে করা হত সে যুগে- নিজ আবাদি ও রায়ত আবাদি। কুঠির উদ্যোগে মজুর লাগিয়ে চাষ করা হলে তা নিজ আবাদী বলা হত। মোল্লাহাটির কুঠিতে ৬০০ এর বেশি শ্রমিক ছিল। এসব শ্রমিক নিয়ে আসা হত সাঁওতাল পরগনা, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার আদিবাসীদের মধ্য থেকে। নিজ আবাদের সমস্ত খরচ ও চাষের সমস্ত ঝুঁকি নিতে হত নীলকর সাহেবদের।
সেজন্য তারা এ পদ্ধতি বিশেষ পছন্দ করত না। ইন্ডিগো কমিশন বলেছেন-নিজ আবাদী চাষে ১০,০০০ বিঘা জমির জন্য নীলকর সাহেবদের খরচ করতে হত আড়াই লক্ষ টাকা-সেক্ষেত্রে রায়ত আবাদী চাষে বিঘা প্রতি দু টাকা দাদন দিলে ২০ হাজার টাকার মধ্যে নীল চাষ করা সম্ভব হত। স্বভাবতই নীলকর সাহেবদের লক্ষ ছিল কম পুঁজি খাটিয়ে বেশি লাভ। সেজন্য পরবর্তীকালে সব কুঠিই রায়তি চাষের দিকে নজর দিয়েছিল।
সে যুগে এক বিঘা জমিতে ১২ বান্ডিল নীল হত এ থেকে ২ সের নীল পাওয়া যেত এবং তার বাজার দাম ছিল ১০ টাকা। সে জন্য চাষীকে নীল উৎপাদনের জন্য কুঠির মালিকরা টাকায় ৪ বাণ্ডিল হিসাবে দাম দিত আর নীল উৎপাদন করতে লাগত এক টাকা। সুতরাং দু’সের নীল তৈরি করতে খরচ লাগত ৪ টাকা। সে স্থলে লাভ হত ৬ টাকা। এর থেকে বোঝা যায় নীল বাণিজ্য ছিল নীলকর সাহেবদের কাছে অসম্ভব লাভের এক ব্যবসা।
এসসি ইডেন দাদন প্রসঙ্গে নীল কমিশনকে বলেছিলেন প্রথমত এটা কখনই হতে পারে না যে রায়ত নীলচাষে গুরুতর লোকসান জেনেও নিজের ইচ্ছায় নীলচাষ করতে সম্মত হয়- যে মুহূর্তে রায়তরা বুঝতে পারল যে তারা আইনত এবং প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন ব্যক্তি সেই মুহূর্তে নীল চাষ বন্ধ করে ছিল। (৩৭)
Leave a Reply