তৃতীয় অধ্যায়
নীলকমিশনও স্বীকার করেছেন এই ব্যবসা কত লাভজনক ছিল। নীল আমাদের একটা মূল্যবান দ্রব্য বিশেষ করে নদীয়া যশোরে যে নীল হয় তা বোধ হয় পৃথিবীর সব থেকে ভালো নীল ভারতের এই অংশে প্রতি বছর গড়পরতা ১,০৫০০০ মণ নীল প্রস্তুত হয়। তার মূল্য ২ কোটি টাকা। নীল ব্যবসার মধ্য দিয়ে ইংরেজ বণিকদের বিশাল বিত্ত স্তূপীকৃত হচ্ছিল আর তার পাশাপাশি আমাদের দেশের গরিবরা প্রতিনিয়ত লোকসানের বোঝা মাথায় নিচ্ছিল।
নীল চাষ না করে অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যাদি চাষ করলে তার থেকে লাভ বেশি হত কিন্তু সে দাদনের টাকা নিতে বাধ্য হয়েছিল যার জন্য নীলচাষ করতে সে বাধ্য হত। ইতিমধ্যে পাট, তামাক ধান এর দাম বেড়েছে-চাষিরা নীল চাষ না করে অন্য কৃষিজাত দ্রব্যাদি উৎপন্ন করে লাভবান হতে পারত কিন্তু তার কোন উপায় ছিল না।
প্রজাকে বাধ্য করার জন্য সমস্ত রকমের উৎপীড়ন -মূলক ব্যবস্থা নীলকর সাহেবরা গ্রহণ করত কয়েদ বেত্রাঘাত মহিলাদের প্রতি অসম্মান নারীধর্ষণ থেকে শুরু করে সমস্ত রকমের বর্বরতায় তারা অভ্যস্ত ছিল। নীল কমিশনের সামনে নীল চাষের আর্থিক লোকসানের দিকটা এভাবে বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেট ইডেন তুলে ধরেছিলেন (৭)। ২ বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে নীল ও তামাক চাষের হিসাব দিয়ে বলেছিলেন- তৎকালীন বাজার দরে ২ বিঘা জমিতে তামাক চাষে অতিরিক্ত লাভ হত ২০ টাকা।
বাংলার সব চাইতে উর্বর এলাকা নদীয়া, যশোর, ২৪ পরগনা, রাজসাহী, মর্শিদাবাদের ২১ লক্ষ বিঘা জমি নীলচাষে নিয়োজিত ছিল এবং এর ফলে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা যাচ্ছিল এবং দুর্ভিক্ষ আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মাঝারি ধরনের জমিতে ধান চাষ করলে চাষির খরচ হত বিঘা প্রতি ৪ টাকা। সে স্থলে সে ধান পেত ৮ মন যার দাম ৮ টাকা ধান চাষে চাষির বিঘা প্রতি লাভ হত চার টাকা।
নীলকমিশনের সামনে মরেল বলেছিলেন তার সুন্দরবনের জমিদারিতে প্রতিবছর বিঘাতে ধানের জন্য খরচ হয় ৭টাকা ৫ আনা ৭১/ পাই আর ফসল হয় ১১ টাকার অর্থাৎ চাষির লাভ হয় ৩ টাকা ১০ আন ৪১/ পাই।
Leave a Reply