রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৬৫)

  • Update Time : বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল
নীল

তৃতীয় অধ্যায়

১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে নীল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে নদীয়া যশোর ঝিনাইদহ বারাসত বসিরহাট খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় তুমুল কৃষক বিদ্রোহ দেখা দিল। অসংখ্য নীল কুঠিতে কৃষকর। অগ্নি সংযোগ করল, চাষিদের সংগঠিত শক্তির জোরে নীলকররা একঘরে হয়ে পড়ল, কোন কৃষক নীলকরদের হয়ে সাক্ষ্য দিতে রাজি হল না; নীলকুঠি থেকে দেশীয় লোকেরা কাজ ছেড়ে বেরিয়ে এল। প্রজা বিদ্রোহের ভয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নীলকর সাহেবরা পিছু হঠলেন। নীল ব্যবসা বাংলায় বন্ধ হল যদিও ভারতের অন্যত্র তা আরও বেশ কিছুদিন চলেছিল।

নীলবিদ্রোহের সময় কৃষকদের ভূমিকা উল্লেখ করে হরিশচন্দ্র লিখেছিলেন-“বাঙলাদেশ তার কৃষকদের সম্বন্ধে নিশ্চয়ই গর্বিত হতে পারে। দরিদ্র, রাজনৈতিক জ্ঞান ও ক্ষমতাবিহীন নেতৃত্ব শূন্য হয়েও এই সব কৃষকরা এমন একটা বিপ্লব ঘটাতে সমর্থ হয়েছে যা গুরুত্বে ও মহত্ত্বে কোন দেশের সামাজিক ইতিহাসের বিপ্লবের তুলনায় নিকৃষ্ট নয়।

এই বিপ্লবের জন্য তাদের অসংখ্য দুর্ভোগ ভোগ করতে হচ্ছে। প্রহার অপমান গৃহচ্যুতি সম্পত্তি ধ্বংস সবই তাদের ভাগ্যে ঘটেছে। সব রকমের অত্যাচার তাদের ওপর হয়েছে। গ্রামকে গ্রাম আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুরুষদের ধরে নিয়ে কয়েদ করে রাখা হয়েছে, স্ত্রীলোকদের ওপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। সব রকমের নৃশংসতা তাদের উপর হয়েছে, তবু রায়তরা মাথা নোয়ায়নি।’

যশোর খুলনার ইতিহাস লেখক সতীশ মিত্র লিখেছেন- ‘গ্রামের সীমায় একস্থানে একটি ঢাক থাকিত। নীলকরের লোকরা অত্যাচার করিতে গ্রামে আসিলে সেই ঢাক বাজাইয়া দিত। অমনি শত শত গ্রাম্য কৃষক লাঠি সোটা লইয়া দৌড়াইয়া আসিত। নীলকরের লোকেরা প্রায়ই অক্ষতদেহে পালাইতে পারিত না। সম্মিলিত প্রজাশক্তির বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হওয়া সহজ ব্যাপার নহে। প্রজাদের নামে অসংখ্য মোকদ্দমা হইত তাহারা জেলে যাইত, বিচারালয়ে তাহাদিগকে সমর্থন করিবার লোক জুটিত না।’

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024