তৃতীয় অধ্যায়
চাষের মরশুমের পর চাষিদের সামনে কোন কাজ থাকে না। সেসময় পাতি কেটে তা থেকে মাদুর তৈরি করা হত। সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গায় বিশেষ করে বরিশাল এর ভোলা পটুয়াখালি, গৌরনদী, ঝলকাটি প্রভৃতি এলাকায় খুলনা জেলার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার, মগরাহাট, ফলতা, হাবড়া, দেগঙ্গা, বসিরহাটের মেটিয়া, ইটিন্ডা, সায়েস্তানগর, তেঁতুলিয়া প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর মাদুর তৈরি করা হত।
বরিশাল, খুলনায় এক ধরনের নকশাকাটা শীতলপাটি তৈরি হত যা শহরের অভিজাত মানুষদের প্রয়োজন মেটাত। এবং এই শীতল পাটি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীরা চালান দিত। বরিশাল খুলনার অনেক মানুষ এই শীতলপাটি তৈরিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখত। গ্রামীণ দুঃস্থ মানুষদের অসময়ে এসব শিল্প কিছুটা আর্থিক দুর্দশা দূর করতে সাহায্য করত।
মাদুর শিল্পের পাশাপাশি অনেক জায়গায় পাট থেকে দড়ি তৈরিতে অনেক মানুষ নিয়োজিত থাকত। বাড়িতে বসে মেয়েদের সাহায্য নিয়ে এসব তৈরি করা হত। বাখরগঞ্জ জেলার গৌরনদী থানার অনেক গ্রামে ১ম মহাযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এ শিল্পের ব্যাপক প্রচলনের কথা জানা যায়। চাষিদের প্রয়োজনীয় লোহার জিনিসপত্রাদি বিভিন্ন গ্রামে তৈরি করার জন্য কর্মকাররা সব গ্রামেই কমবেশি থাকত।
কিন্তু সে যুগে কুটির শিল্পের স্তরে এই শিল্প থাকলেও কতকগুলি এলাকার লোহাজাত বিভিন্ন জিনিসের সারা বাংলাদেশে ব্যাপক চাহিদা ছিল। হাড়োয়ার গোপালপুর তালা শিল্পের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছিল। বাদুড়িয়া থানার চিতুর, বসিরহাটের গাছা, আখারপুর গ্রামের কর্মকারর সেদিন উন্নত মানের লোহার বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করত তা বিভিন্ন জায়গায় পাঠান হত।
কিন্তু এসব কুটিরশিল্পের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছিল ১ম মহাযুদ্ধ- পরবর্তী কালে ভাটার টান। গ্রামের কর্মকাররা ধীরে ধীরে জীবিকাচ্যুত হচ্ছিল। পূর্বে জমিদার নায়েব মশাইদের প্রশ্রয়ে নবউঠিত এলাকায় দূর থেকে এসব মানুষ এসে বসত তৈরি করেছিল।
Leave a Reply