সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৪৪)

  • Update Time : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ১১.০০ এএম

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

কাল যাইব দেশে। নানাবাড়ি আসিয়া বাঁশের বাঁশি বানাইয়াছি। তীর-ধনুক বানাইয়াছি। ফটকা বানাইয়াছি। আর গহন জঙ্গল হইতে সজারুর কাঁটা সংগ্রহ করিয়াছি। সেসব যত্ন করিয়া বাঁধিয়া, খাইয়া লইয়া শুইতে গেলাম। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম এসব দেখিয়া আমার দেশের খেলার সাথীরা কিভাবে লোলুপ দৃষ্টি মেলিয়া আমার দিকে তাকাইবে।

এখানে আসিয়া সুপারি গাছে ওঠা শিখিয়াছি। দুই পায়ের বুড়ো আঙুলের সঙ্গে এক গোছা ছোট্ট দড়ি আটকাইয়া সুপারি গাছে উঠিতে হয়। সুপারি গাছের তো ডাল নাই। যদি ছেঁচড়াইয়া পড়িয়া যাইতে চাহি তবে সেই দড়িগাছির সঙ্গে আটকাইয়া দুই হাতে গাছ ধরিয়া থাকা যায়। তারপর নামিবার সময় দুই পায়ের দড়িতে একটু ঢিল দিলেই ছড়াৎ করিয়া নামিয়া আসা যায়। কিন্তু দুই হাতে সুপারি গাছ ধরিয়া রাখিতে হইবে। নচেৎ পড়িয়া যাইবে। এসব কৌশল দেশের ছেলেরা জানে না।

আমাদের দেশে তো সুপারি গাছ নাই। কিন্তু কি করিয়া এই সদ্যলাভ করা বিদ্যা দেশের ছেলেদের মধ্যে জাহির করিব? মনে মনে ভাবিতে থাকি। আচ্ছা, বড় একটা বাঁশ বাহিয়া তো উপরে ওঠা যায়। ভাবিতে ভাবিতে ঘুম আসে না। মা আর নানিও আজ রাতে ঘুমাইতেছে না। কি যে গল্পে পাইয়াছে তাঁহাদের। কথার যেন শেষ হইতে চাহে না। নানির হাতের পাখাখানা আমার মাথার উপর আর মায়ের মাথার উপর কড়াৎ কড়াৎ করিয়া ঘুরিতেছে।

পরদিন মথুরার দূত সত্যই আসিল। দুইজন বেহারা লইয়া আফাজদ্দীন আসিয়া উপস্থিত হইল। আফাজদ্দীন আমাদের বড়ই আপনজন। তার পৈতৃক সম্পত্তি সাতে পরে জোর করিয়া খাইতেছিল। আমার পিতা তাহাকে সমর্থন করিয়া মামলা মোকদ্দমা করাইয়া তাহার সম্পত্তির পুনর্দখল করাইয়াছেন। সেইজন্য এ-কাজে ও-কাজে আফাজদ্দীন আমাদের সাহায্য করে। এত দূরের পথ। আমি হাঁটিয়া যাইতে পারিব না।

মাঝে মাঝে আফাজদ্দীন আমাকে কোলে করিয়া লইয়া যাইবে। সেইজন্য বেহারাদের সঙ্গে আফাজদ্দীনও আসিয়াছে। সোয়ারি-বেহারারা আমাদের পাশের গ্রামেরই লোক। বহু পুরুষ হইতে আমাদের বাড়ির মেয়েরা ওদের সোয়ারিতে যাওয়া-আসা করে। ওরা খুবই বিশ্বাসী। সোয়ারি-বেহারাদের দেখিয়া মা’র বুকখানা যেন ছ্যাৎ করিয়া উঠিল। অতটুকু বয়সেই আমি তাহা বুঝিতে পারিলাম।

চলবে…

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024