শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

ক্যান্টমেন্টে টয়লেটে যাবার সময় গুলি করা হয় সার্জেন্ট ফজলুল হককে

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৫.৪২ পিএম

সৈয়দ জিয়াউল হক

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান মাইল ফলক। ১৯৬৮ সালে স্বৈর-শাসক আইয়ুব খানের সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সামরিক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ও ৩ জন সি এস পি কর্মকর্তাকে জড়িয়ে একটি মামলা তৈরী করে। উল্লেখ্য যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানী শাসকবর্গের ক্রমাগত বৈষম্যমূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তাঁর ঐতিহাসিক ৬-দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি তাঁর ৬-দফা কর্মসূচিকে বাঙ্গালীদের মুক্তিসনদ বলে আখ্যায়িত করে এর স্বপক্ষে সারা পূর্ব বাংলায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। আইয়ুব সরকার ছাড়াও পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক দল এমনকি বামপন্থী দলগুলোও ৬-দফার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে প্রয়োজনবোধে অস্ত্রের ভাষায় ৬-দফার জবাব দেয়া হবে। বিভিন্ন জেলায় বক্তৃতার পর সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একটির পর একটি মামলা দায়ের করতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ৮ মে (১৯৬৬) নরায়ণগঞ্জে জনসভা শেষ করে ঢাকা ফিরে আসলে রাতেই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৩২(১) ধারায় ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অবস্থায়ই তাঁকে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত করা হয়।

 

৬-দফাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের উপর ব্যাপক নির্র্যাতন নেমে আসে। কিন্তু সরকারের দমননীতি যতই বাড়তে থাকে ৬-দফা ও শেখ মুজিবের প্রতি মানুষের সমর্র্থন ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। আইয়ুব খান বুঝতে পারেন শেখ মুজিবই পূর্র্ব পাকিস্তানকে শোষণের পথে একমাত্র বাঁধা। তাঁকে শেষ করতে পারলেই বাঙ্গালীদের সকল প্রকার আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়া সম্ভব হবে। তারা শেখ মুজিবকে ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলানোর পথে আগাতে থাকে। ৬ জানুয়ারী (১৯৬৮) এক সরকারী প্রেসনোটে জানানো হয় যে ভারতের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার জন্য লে: কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ২৮ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযুক্তরা তৎকালীন ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন অফিসের ফার্র্স্ট সেক্রেটারী পি এন ওঝার মাধ্যমে আগরতলায় ভারতীয় সামরিক কর্র্মকর্র্তা লেঃ কর্নেল মিশ্র এবং মেজর মেননের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার বিষয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তান সরকার পি এন ওঝাকে বহিস্কার করে এবং তাঁকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত নয়াদিল্লীর পাকিস্তান হাইকমিশনের উপদেষ্টা এম আহমদকেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে নয়াদিল্লী ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতের নিরাপত্তা বিরোধী ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকার এবং ভারতের অখন্ডতাবিরোধী চক্রকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়।

 

এর ১২ দিন পর ১৮ জানুয়ারী (১৯৬৮) সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কাশ্মীর বিষয়ক বিভাগ থেকে জারীকৃত আর একটি প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয় পূর্র্ব-পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে শেখ মুজিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাওয়ায় তাঁকে েেগ্রফতার করা হয়েছে। শেখ মুজিব ৬-দফা ঘোষণার পর ৮ মে (১৯৬৬) থেকে কারাগারে আটক ছিলেন। ১৭ জানুয়ারী (১৯৬৮) দিবাগত গভীর রাতে তাঁকে মুক্তি দেয়ার কথা বলে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল গেট থেকে আবার বন্দী করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাওয়া হয়। ২১ শে এপ্রিল (১৯৬৮) প্রেসিডেন্ট কর্র্তৃক জারীকৃত এক অর্র্ডিন্যান্সের দ্বারা পাকিস্তান পেনাল কোডের ১২১(ক) ও ১৩১ ধারা অনুযায়ী আটককৃতদের বিচার শুরু করার জন্য বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। পেনাল কোডের ১২১ ধারায় বলা হয়েছে ‘‘Whoever wages war against Pakistan, or attempts to wage such war, or abets the waging of such war, shall be punished with death or imprisonment for life, and also be liable to fine.’’ পেনাল কোডের ১৩১ ধারাটি মূলত সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত আসামীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ধারায় উল্লেখিত হয়েছে, Whoever abets the committing of mutinity by an officer, soldier, sailor or airman, in the Army, Navy or Airforce of Pakistan, or attempts to seduce any such officer, soldier, sailor or airman from his allegiance or his duty, shall be punished with imprisonment for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine.’’ তিন সদস্য বিশিষ্ট এই বিশেষ আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন সুপ্রীম কোর্র্টের প্রধান বিচারপতি এস এ রহমান। তিনি পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাঁর পুরো নাম ছিল শেখ আবদুর রহমান। তবে তিনি বিচারপতি এস এ রহমান নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন। তিনি পূর্র্ব পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদের অধিবাসী। ট্রাইবুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বাঙ্গালী। তাঁরা ছিলেন পূর্র্ব পাকিস্তান হাই কোর্র্টের বিচারপতি মুজিবর রহমান ও বিচারপতি মাসসুমুল হাকিম। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেই বিচারের আদালত স্থাপন করা হয় এবং মামলাটি ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে পরিচিত ছিল। তবে এর দাপ্তরিক নাম ছিল State versus Sheikh Mujibur Rahman and Others.

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালেই ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম পাকিস্তানে তাসখন্দ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্যোগে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে পূর্র্ব পাকিস্তানেও শুরু হয় স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সরকারবিরোধী আন্দোলন। পূর্র্ব পাকিস্তানে এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেন মওলানা ভাসানী। ৪ জানুয়ারী (১৯৬৯) পূর্র্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ), ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) ও এন এস এফ এর একটি অংশ নিয়ে ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্র্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ১০ জানুয়ারী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান এবং ২৪ জানুয়ারী নবকুমার স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমান শহীদ হওয়ার পর আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ১৪৪ ধারা এমনকি কারফিউ ভঙ্গ করে ছাত্র জনতা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্র্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটতে থাকে।

এরই মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারী (১৯৬৯) ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে ঘটে এক পৈশাচিক ঘটনা। সকালে প্রহরারত গার্ডের অনুমতি নিয়ে মামলার দুই অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ফ্লাইট সার্র্জেন্ট ফজলুল হক টয়লেটে যাওয়ার সময়ে মঞ্জুর শাহ নামক একজন হাবিলদার তাঁদের উপর সামনে থেকে গুলীবর্র্ষণ করতে থাকে। গুলীবর্র্ষণের পর তাঁদের উপর বেয়নেট চার্র্জও করা হয়। মৃত মনে করে তাঁদেরকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সার্র্জেন্ট জহুরুল হকের অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাই উপস্থিত একমাত্র ডাক্তার ক্যাপ্টেন এম এম আলী প্রথমে ফ্লাইট সার্র্জেন্ট ফজলুল হকের অপারেশন শুরু করেন। অপারেশনে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগে। ফজলুল হকের অপারেশন শেষ হওয়ার পর তিনি সার্র্জেন্ট জহুরুল হকেরও অপারেশন করেন। কিন্তু তাঁকে শেষ পর্র্যন্ত বাঁচানো যায়নি। হৃদপিন্ডে সরাসরি কোন গুলী না লাগার কারণে ফজলুল হক বেঁচে যান। অভিযুক্তরা পালানোর সময় তাঁদেরকে গুলী করা হয় বলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রচার করে, কিন্তু তাঁদের দুজনকেই গুলী করা হয়েছিল সামনে থেকে। আমার সঙ্গে আলাপে মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট আবদুল জলিল জানান পিছন থেকে গুলী লেগেছিল মর্র্মে মিথ্যা রিপোর্র্ট দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনী থেকে ডা. আলীর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাঁর স্ত্রী ছিলেন একজন বিদেশিনী। তিনি স্বামীকে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দেন যে তিনি যদি মিথ্যা রিপোর্র্ট প্রদান করেন তবে তিনি তাঁকে ডিভোর্র্স দিবেন। অকুতোভয় ডা. আলী কর্নেল হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। বর্র্তমানে তিনি প্রয়াত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী অষ্ট্রেলিয়া চলে যান। সার্জেন্ট জলিল তাঁর নামটি স্মরণ করতে পারেননি, তাই এই মহিয়সী নারীর নাম জানা সম্ভব হয়নি।

সার্র্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর খবরে ঢাকা শহর অগ্নিগর্র্ভ হয়ে ওঠে। ১৬ ফ্রেব্রুয়ারী জহুরুল হকের লাশ নিয়ে বিরাট শোক মিছিল বের হয় এবং বিকেলে পল্টন ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পল্টন ময়দান থেকে এক বিরাট জঙ্গী মিছিল বের হয়। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে আসতে থাকে অসংখ্য মিছিল। সারা ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বিক্ষুদ্ধ জনতা কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন এবং প্রাদেশিক মন্ত্রী সুলতান আহমদের বাসভবনে অগ্নিসংযোগের পর আগরতলা মামলার ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারপতি এস এ রহমানের বাসভবন আক্রমণ করে। বিচারপতি রহমান তাঁর গৃহভৃত্যের লুঙ্গী ও গেঞ্জী পরিধান করে বাসার পিছনের দেয়াল টপকিয়ে পলায়ন করে জীবন রক্ষা করেন। জনতা তাঁর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে। বিচারপতি এস এ রহমানের বাড়ীর আগুনের লেলিহান শিখা বস্তত:পক্ষে আগরতলা মামলার অভিযুক্তদের পক্ষে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে বাংলার আপামর মানুষের তীব্র ঘৃণারই জলন্ত বহি:প্রকাশ। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারী (১৯৬৯) সামরিক বাহিনীর গুলীতে শহীদ হন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুজ্জোহা। ২১ ফেব্রুয়ারী (১৯৬৯) আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে তিনি পরবর্র্তী নির্র্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্র্থী হবেন না। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। আন্দোলন দিনে দিনে তীব্র হতে থাকে এবং আরও জঙ্গীরূপ ধারণ করে। অবশেষে আইয়ুব ২২ ফেব্রুয়ারী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সকল বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২৩ ফেব্রুয়ারী রেসকোর্র্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সর্র্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবকে গণসম্বর্র্ধনা দেয়া হয়। এর পূর্বে ঢাকায় আর কখনও এত বড় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়নি। সভার সভাপতি ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমদ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধিতে ভূষিত করার প্রস্তাব করলে উপস্থিত জনতা হাত তুলে মুহুর্র্মুহু শ্লোগানের মাধ্যমে তার প্রতি সমর্র্থন জানায়। সেই থেকে শেখ মুজিব হলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে তাঁকে শেষ করে দেয়ার অপচেষ্টাকে ব্যর্র্থ করে দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। আমার পরম সৌভাগ্য যে আমি আমার পিতার সঙ্গে রেসকোর্সের সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। আমার এখনও মনে আছে, বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় বাকরুদ্ধ কন্ঠে সার্জেন্ট জহুরুল হকের নাম উচ্চারণ করে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র বলতে যা বুঝানো হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা কোন ষড়যন্ত্র ছিল না, এটি ছিল একটি বিদ্রোহ পরিকল্পনা। লে: কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিলেন নৌ, পদাতিক ও বিমান বাহিনীর কতিপয় অকুতোভয় বাঙ্গালী দেশপ্রেমিক সেনা। তাঁরা উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন যে পূর্র্ব বাংলার প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পূর্র্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কায়েম করা। তাঁদের এই পরিকল্পনা দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলতে থাকে। তাঁরা এক পর্র্যায়ে তাঁদের পরিকল্পনার সাথে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন জনসমর্র্থনের জন্য। বিদ্রোহীরা বিদ্রোহের দিন হিসেবে ১৯৬৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী বেছে নেন। ঐ দিনটি ছিল বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মুসার যোগ দেয়ার কথা ছিল। বিদ্রোহীদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমেই জেনারেল মুসাকে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের পদাতিক ও বিমান বাহিনীর অস্ত্রাগারের দখল নেয়া। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল একই সঙ্গে কুমিল্লা, যশোরসহ প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টেও বিদ্রোহ সংগঠিত করা। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু সিরাজউদ্দৌলা, সূর্র্যসেন, ক্ষুদিরাম, নেতাজী সুভাষ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম দেয়নিÑজন্ম দিয়েছে মীর জাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্র্লভ, উঁমিচাদ, খাজা নাজিমুদ্দীন আর খন্দকার মোশতাক আহমদের মত বিশ^াসঘাতকদের। বিদ্রোহীদের সকল পরিকল্পনা গোপনে পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনীকে জানিয়ে দেয় প্রাক্তন করপোরেল আমির হোসেন মিয়া এবং নায়েব সুবেদার আশরাফ আলী খান। তারা বিদ্রোহ পরিকল্পনার বিবরণ লিখিত আকারে রাওয়ালপিন্ডির গোয়েন্দা অফিসে দাখিল করে। এরই সূত্র ধরে শুরু হয় বিদ্রোহীদের গ্রেফতার এবং তাঁদের কারো কারো উপরে চলে অকথ্য নির্র্যাতন।

১৫ ফেব্রুয়ারী (২০২৪) আগরতলা যড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৫৫ তম শাহাদাত বার্ষিকী। দেশ মাতৃকার এই মহান সন্তানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। সার্জেন্ট জহুরুল হকের স্মৃতি অমর হোক॥

 

*সৈয়দ জিয়াউল হক : প্রকৌশলী, তথ্য প্রযুক্তিবিদ, লেখক ও গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024