ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
এইসব ধর্মীয় সংগঠনের পাশে কম অভিজাত এবং ছোট মন্দিরের অবস্থান। তবে এর মধ্যেও উল্লেখ করা দরকার ক্রমশ গড়ে ওঠা শহরের বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য থাকার বাড়ি তৈরি করা হোত। শহরের মধ্যে প্লাজাগুলিকে শহরের মানুষের যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত।
আরেকটি লক্ষ্যণীয় দিক হল শহরাঞ্চল এবং অন্যান্য এলাকার বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কোনরকম প্রযুক্তিগত উপাদান, যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হতো না। বাড়ি তৈরির সাজসরঞ্জামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হল পাথর এবং জনবল। এছাড়া চুনাপাথর (limestone)-এর ব্যবহার দেখা গিয়েছে।
পরবর্তী সময়ে চুনাপাথরের প্রয়োজন কমে যায় এবং গড়ে ওঠে কিছু সাবেকি কলা-কৌশল। এছাড়া সাধারণ মানের বাড়ি তৈরি করা হোত কাঠের নানারকম জিনিস এবং বেড়া দিয়ে। কোমালকালকো শহরের কয়েকটি বাড়ি পাথরের পরিবর্তে পোড়ানো মাটি বা ইটের মত কিছু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এমনও দেখা গেছে।
বিশেষ গড়নের বড় বড় বাড়ি: মায়া জনসমাজের নানা বৈশিষ্ট্যর মধ্যে অন্যতম সংযোজন হল বিশেষ কায়দায় চুনাপাথর দিয়ে তৈরি মঞ্চ। এগুলিকে বাড়িও বলা যায়। এই ধরনের মঞ্চ চার মিটার উঁচু হয় এবং এখানে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।
এই ধরেনের মঞ্চের আকার বিশেষ ধরনের এবং এর মধ্যে বাঁকানো কায়দায় কিছু অঙ্কণ যুক্ত করা হয়। তবে এইসব সাজানো বড় বাড়িগুলি প্রায়ই শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছে তৈরি করা হয়। তবে এইসঙ্গে রাজবাড়ি বা প্রাসাদও শহরে দেখা যেত।
তবে এই ধরনের প্রাসাদ একতলার হোত এবং তাতে থাকত ছোট ছোট ঘর এবং ভেতরে থাকত একটা বারান্দার মত এক ফালি জমি। এছাড়া কোপান (Copan) অঞ্চলে চারশ বছরের পুরনো নকশা করা বাড়ি আবিষ্কার করা হয়েছে এবং তিকাল (Tikal) নামক শহরে প্রাক্ এবং প্রথম যুগের ক্লাসিক সভ্যতার অনেক কবরও উদ্ধার করা হয়েছে।
অন্যভাবে বলা যায় মায়া শহরের মধ্যে এক ধরনের স্বাভাবিক রহস্যঘেরা আছে। অনিবার্যভাবে প্লাজার পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি পিরামিড মন্দির এবং তাতে প্লাজার দিকে তিনটি ছোট মন্দিরের সামনে মুখ করা। তবে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলি খুব উঁচু পিরামিড-এর উপরে অবস্থিত। কেননা এই উচ্চতা স্বর্গের কাছাকাছি বলে বিশ্বাস করা হয়।
(চলবে)
Leave a Reply