আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
তিম্কা আস্তে আস্তে ওর লাঠির ডগাটা ফিঞ্চের কাছে সরিয়ে আনল। পাখিটা একচোখে ফাঁসের দিকে একবার তাকিয়ে ধীরেসুস্থে পাশের ডালে সরে গেল। গভীর মনোযোগে জিভ বের করে, দম বন্ধ করে তিকা আবার ফাঁসটা পাখির দিকে সরিয়ে আনতে লাগল। আর বোকা ফিল্ডটা তিষ্কার কাজকর্ম যেন বেশ কৌতূহলের সঙ্গে লক্ষ্য করতে লাগল। তারপর হাঁদার মতো নির্বিকারভাবে ফাঁসটাকে ওর মাথার ওপর দিয়ে গলাতে দিল। তিকা হাতের লাঠিতে একটা ঝাঁকুনি দিতেই আধা-ফাঁসি- যাওয়া অবস্থায় ফিল্মটা একটা টা-শব্দ পর্যন্ত না করে পাগলের মতো ডানা ঝাপটাতে-ঝাপটাতে স্তূপ করে ঘাসে এসে পড়ল। মিনিটখানেকের মধ্যে দেখা গেল পাখিটা আর তার আরও গোটা পাঁচেক সঙ্গী একটা খাঁচার মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।
এক গায়ে লাফিয়ে নাচতে নাচতে ওদিকে তিম্কাও চে’চাতে লাগল, ‘দেখছিস, দেখছিস! কী দুর্দান্ত কায়দা! ছ-ছটা পাখি। কেবল সবকটাই ফিল্ম এই-যা। তা বলে টিট-পাখিকে এভাবে ধরা যাবে না। ফাঁদ, জাল, এই সব ব্যবহার করতে হবে। ওরা ভীষণ চালাক। এই বোকাগুলোই কেবল মাথা গলিয়ে দেয়…’
আচমকা থেমে গেল তিমুকা। মুখখানা স্থির হয়ে এমন পাথরের মতো হয়ে গেল যে দেখে মনে হচ্ছিল কেউ বুঝিমোটা লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরেছে মাথায়। আমাকে সাবধান করে ঠোঁটে একটা আঙুল ঠেকিয়ে পুরো দু-মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তারপরই লাফিয়ে উঠল। বলল:
‘শুনলি তো?’
‘কাঁ শুনব? আমি তো শুধু, রেলস্টেশনে এজিনের বাঁশি বাজতে শুনলুম।’
‘হায় কপাল! কিছু শুনতে পায় না!’ অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে হাত দুটো আকাশপানে তুলে তিল্কা বলল, ‘রবিন রে! শুনলি না, ডেকে উঠল? সত্যিকার রাঙা বুকগুলা রবিন। এক হপ্তার বেশি আমি ওটাকে খুজছি। সেই জলে-ডোবা লোকটাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছিল, জানিস তো? সেই, সেইখানে ওর বাসা। কোনো একটা মেপ্ল্ল-গাছে। মেপ্ল-গাছে জঙ্গল হয়ে আছে জায়গাটায়, আর গাছের পাতাগুলো এখন দেখতে লাগছে আগুনের মতো, ঝলমল করছে যেন। চল্, যাবি? দেখে আসব।’
Leave a Reply