আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
মা আমাকে এক রকম কাপড় দিয়ে টিউনিক আর ট্রাউজার্স বানিয়ে দিলেন। কাপড়টাকে বলা হত শয়তানের চামড়া।
নির্ঘাত কাপড়টা শয়তানের পিঠের চামড়া থেকে তৈরি হয়েছিল তা না হলে একদিন মঠের ফলবাগানে ফল চুরি করতে গিয়ে প্রকান্ড, জবুথবু চেহারার এক সন্ন্যাসী লাঠি হাতে আমাদের তাড়া করলে পাঁচিল টপকে হাঁচড়পাঁচড় করে পালাতে গিয়ে আমার ট্রাউজার্স’ যখন একটা বড় পেরেকে আটকে গেল তখন শত টানাটানিতেও কাপড়টা ছিাড়ল না কেন। আর এর ফলে সেদিন পেরেকে ট্রাউজার্স বেধে আমি ঝুলতে থাকলুম আর সন্ন্যাসীটা বেশ আশ মিটিয়ে আমার পিঠে সজোরে গোটা দুই লাঠির ঘা লাগাল।
আরও একটা নতুনত্ব ঘটল জীবনে। আমাদের ইশকুলের সঙ্গে একজন সামরিক অফিসার যুক্ত হলেন। আমাদের জুটল সত্যিকার রাইফেলের মতো দেখতে সব কাঠের রাইফেল। তাই নিয়ে আমাদের সামরিক কুচকাওয়াজ শুরু হল।
এক পা-ওয়ালা সেই সৈনিকটি আমাদের চিঠি এনে দেবার পর বাবার কাছ থেকে আর একটিও চিঠি পাই নি। আমার ছোট্ট বোনটা সব সময়ে বাবার চিঠির অপেক্ষায় থাকত। ফেকার বাবাকে তাঁর ডাকপিওনের ব্যাগ নিয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলেই আমার ছোট বোনটি জানলা দিয়ে বাইরে মাথা গলিয়ে রিট্রিনে গলায় ডাকাডাকি শুরু করত:
‘সেগে’ই-কাকা, বাবা কিছু পাঠিয়েছে?’
আর ওঁর কাছ থেকে সেই একই উত্তর মিলত:
‘না, খুকি, আজ তো আসে নি। তবে কাল নিশ্চই আসবে, দেখো।’ কাল- কাল কাল। সেই কাল কিন্তু আসত না কিছুতেই।
Leave a Reply