ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়াদের কৃষিকাজ এবং ফসল
মায়াদের জনজীবন এবং দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম লক্ষ্যণীয় দিক হিসেবে উল্লেখ করতে হয় কৃষিকাজ বা কৃষি পদ্ধতির। একথা সাধারণভাবে বলা যায় মায়া জনসমাজের অন্যতম প্রধান জীবিকা কৃষিকাজের বিশেষ কিছু দিক আছে। একথা প্রথমদিকে বিশ্বাস করা হত পোড়া কৃষির মধ্য দিয়ে মায়াদের প্রায় সব খাদ্যই পাওয়া যেত।
কিন্তু তখন মনে করা হয় শস্যক্ষেত, বনবাগান, হরিণ এবং বনচাষ ক্লাসিক পর্বের মানুষকে বিশেষভাবে সাহায্য করত। বস্তুত এখনো চাষ- ফলনের বিভিন্ন পদ্ধতির প্রমাণ পাওয়া যায়। আকাশ থেকে ফটো তুলে দেখা যায় খাল দিয়ে যোগ করা ক্ষেত এখনো দেখা যায়। আর্থিক মূল্যে বেশ লাভজনক কিছু ফসলের চাষ করা হত।
শস্য,সূর্যমুখীর বীজ, তুলো এবং অন্যান্য কিছু শস্য খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ শতকে মেসোআমেরিকা অঞ্চলে চাষ করা হত।সাম্প্রতিক মায়া জনসমাজ বর্তমানেও এই ধরনের কিছু সাবেকি কৃষিকাজ করে। যদিও সময় ও পরিস্থিতি বদলের চাপে তারা এই ধরনের চাষ বা কৃষিকাজ কিছুটা পরিবর্তন করেছে।এছাড়া কৃষিপদ্ধতি পরিবর্তনের অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা,সংস্কৃতি, জলহাওয়া এবং সার-এর অভাব এবং রাসায়নিক-এর পবিরর্তন ইত্যাদি।
বয়ন শিল্পের বৈশিষ্ট্য: মায়া জনসমাজের চাষ, কৃষিপণ্য প্রসঙ্গে তুলোর কথা উঠবেই। এই তুলোকে পণ্য হিসেবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করার অপর নাম হল বয়ন শিল্প (Textile)। ক্লাসিক মায়াযুগে বয়ন শিল্পের তেমন প্রচলন হয়নি। পরবর্তীকালে ক্লাসিক-উত্তর যুগে বয়ন শিল্পের সূচনা ঘটে পূর্ব চিয়াপাস এলাকায়।
চিচেনইতজার কুয়ো থেকে পাওয়া কার্বনাইজড কাপড় পাওয়া গেছে। ক্লাসিক-উত্তর কালে কিছু জটিল তাঁতও উদ্ধার করা হয়েছে। এক নজরে প্রাচীন মায়াযুগের খুব কমই বয়ন শিল্প দেখা গেছে। কিন্তু উত্তর ক্লাসিক যুগের ভাস্কর্য পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে মায়াযুগে নানা বৈচিত্র্যের প্রচুর বয়ন বা তাঁতবস্ত্র ছিল।
গুয়াতেমালার মালভূমিতে তাঁত বস্ত্রের উপর নানাবিধ অঙ্কণ, চিত্রকলার ছাপ পাওয়া গেছে। পূর্ব চিয়াপাস-এর লাকানডন মায়ারা এখনো হস্তশিল্প হাতে তাঁত কাটার কাজ করে। অবশ্য উত্তর ইউকাতান অঞ্চলে এই তাঁতশিল্প এখন আর দেখা যায় না। হাতে বোনা তাঁত এবং কাপড়ের মায়া নাম হল ‘পাতি’ (Pati)।
(চলবে)
Leave a Reply