ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
এই হাতে কাটা তাঁতশাড়ি সাধারণত একই আকার ও দামের করা হত। কিন্তু স্প্যানিশ আগমনের পর এই তাঁতবস্ত্রকে মায়ারা নানা অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই মায়াশাড়ি পাতি আবার ভারতবর্ষের বাংলা, অসমে দেখা যায়। এইসব অঞ্চলে পাতির অর্থ হল লম্বা একফালি কাপড়। আবার এমন হতে পারে যে বিশেষ কায়দায় বোনা শাড়ি হল পাট (পাটভাঙা শাড়ি স্মর্তব্য)।
সংস্কৃত ভাষায় আমরা দেখেছি পাট্টা। মায়া এবং মায়াদের মধ্যে এটি হল ধ্বনিগত ও শব্দগত সাদৃশ্যের নমুনা। এই মিল প্রসঙ্গে পুরাতাত্ত্বিকরা মনে করেন প্রাচীনকালে ভারতবর্ষ ও মেক্সিকোর মধ্যে সূতো, শাড়ির ব্যবসা ছিল। এই সূত্র থেকে শব্দ ও অন্যান্য দিকে পারস্পরিক প্রভাব প্রক্রিয়া ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।
মায়া-সমাজে রঙ্গীন চিত্রাঙ্কণ: মায়াদের মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতি, শিল্পকলা, চারুকলা সব রকমের গুণাবলী দেখা গেছে। এই গুণাবলীর অন্যতম সংযোজন হল রঙ্গীন চিত্রাঙ্কণ বা পেইন্টিং। চিত্রকলায় মায়ারা এক উচ্চমার্গীয় স্তরে পৌঁছেছিল। মায়াদের চিত্রাঙ্কণ বিশেষ মান অর্জন করেছিল দেয়ালচিত্রে। মহাভারতের যুগে আমাদের দেশে রাজপ্রাসাদ তৈরিতে মায়া-স্থাপত্যের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
এই মিল ও প্রভাব থেকে একথা মনে করা যায় মেক্সিকো ও ভারতবর্ষের স্থপতি ও ভাস্কররা দুই দেশে কাজ করেছিলেন। বিশেষ করে অজন্তার গুহা ভাস্কর্যে যে দক্ষতা শৈলীর ছাপ আমরা দেখি তাতে মেক্সিকো তথা মায়াশিল্পীদের ছাপ স্পষ্ট অনুভব করা যায়। আবার মেক্সিকোতে দেয়ালচিত্রে যেসব হাতির মাথা নিয়ে দেবতামূর্তি দেখা যায় তা থেকে মনে করা যায় ভারতীয় শিল্পী ও ভাস্কররা মেক্সিকোতে গিয়ে এই ধরনের কাজ করেছিল। কেননা ঐ সময়ে মেক্সিকোতে হাতি বা হাতির ধারণা ছিল না।
(চলবে)
Leave a Reply