অধ্যাপক ডাঃ এস এম বখতিয়ার কামাল
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে কতগুলো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দেয়। এদের মধ্যে প্রধানতম পরিবর্তন ঘটে আমাদের ত্বকে। এর ফলে ত্বক কুঁচকে যায়, ভাঁজ দেখা দেয়। যাকে সাধারণত বলিরেখা বলা হয়। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার; কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই এটি হতে দেখা যায়। তারুণ্য ঢাকা পড়ে যায় বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের আড়ালে। এমনটি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন।
কেন হয়?
এটি বয়োবৃদ্ধির স্বাভাবিক ঘটনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। যার দরুন ত্বক নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা হারায়। এরই ফল হিসাবে ত্বকে বলিরেখা, ভাঁজ বা বিভিন্ন দাগ দৃশ্যমান হতে দেখা যায়। তরুণ বয়সে ত্বকে কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুতই সেরে যায়; কিন্তু বয়স যখন বেড়ে যায়, তখন ত্বকের নমনীয়তা কমে যাওয়ায় ত্বকে স্থায়ী গর্ত বা ক্ষত তৈরি হয়। অনেকের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বা পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই যে বলিরেখা দেখা দেয়, তার কিছু কারণ আছে। এক্ষেত্রে বংশগত, জীবনযাপন প্রক্রিয়া, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, সূর্যালোক প্রভৃতি বিষয়ের ভূমিকা রয়েছে।
বলিরেখা প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয়—
বলিরেখা প্রতিরোধে প্রথমেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা জরুরি। অযথা রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। শোয়ার সময় বালিশ এমনভাবে রাখুন, যাতে মুখ বা গলার ত্বকে কোনোরূপ চাপ না পড়ে। প্রতিদিন কিছু সময় শরীরচর্চা করবেন। শারীরিক পরিশ্রমও গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনোভাবেই বেশি পরিশ্রম করবেন না। আনন্দ, বিরক্তি বা হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় যথাসম্ভব চোখ—মুখ কুঁচকে থাকবেন না।
গুরুত্ব দিন পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে। ভাজাপোড়া, বেশি তেলযুক্ত খাবার, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, সি ও ই রাখবেন। এক্ষেত্রে গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, মিষ্টি আলু, পেঁপে, কমলালেবু, পেস্তাবাদাম, চীনাবাদাম, কাঠবাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে নিয়মিত। পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া ও চিনি খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।
অধিক সূর্যালোক এড়িয়ে চলবেন। রোদের সময় বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। চোখে রোদ প্রতিরোধী চশমা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা হাতাওয়ালা, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন—ধোয়া—মোছার কাজের সময় হাতে গ্লাভস পরে নিন। ধুলাবালি, ময়লা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, লোশন ত্বকের জন্য ভালো। এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি—
বলিরেখা দূরীকরণে সর্বাধুনিক চিকিৎসার নাম বোটক্স (বটুলিনাম টক্সিন)। মূলত ইনজেকশনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ব্যথামুক্ত উপায়ে বোটক্স করা হয়। ২৫ বছর বয়সের বেশি যে কেউ এ চিকিৎসা নিতে পারেন। একবার বোটক্স নিলে ৫—৬ মাস পরপর রিটাচ করতে হয়।
Leave a Reply