নন্দকুমার, বাদশাহ ও নবাৰ- উজীর ক ইংরেজদিগের ঘোরতর প্রতিদ্বন্দ্বী দেখিয়া, ইংরেজদিগের ক্ষমতা হ্রাসের জন্য তাঁহাদের সহিত নানারূপ পরামর্শ করিতে প্রবৃত্ত হন। তিনি উক্ত বিষয়ে বলবন্ত সিংহকে যে সকল পত্র লেখেন, তন্মধ্যে একখানি পত্র ইংরেজদিগের হস্তগত হওয়ায় ইংরেজেরা তাঁহার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইলেন। ইংরেজসেনাপতি জেনারেল কার্ণাক তাঁহাকে প্রহরিহস্তে সমর্পণ করিয়া, কলিকাতায় পাঠাইতে ইচ্ছা করিলে, সকলে মধ্যস্থ হইরা তাঁহার ক্রোধের উপশম করিয়াছিলেন।
এই’ সময়ে রাজা নবকৃষ্ণও নাকি নন্দকুমারের জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন। নবকৃষ্ণ তৎকালে মেজর আডান্সের বেনিয়ানের কাজ করিতেন। বক্সারের যুদ্ধের পর বাদশাহ ও নবাব-উজিরের সহিত ইংরেজদিগের সন্ধি স্থাপিত হইলে, মীর জাফর ও নন্দকুমার কলিকাতায় আসিলেন। কাউন্সিলের সভ্যেরা পূর্ব্ব হইতেই নন্দকুমারের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন, এক্ষণে আরও অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিলেন। তাহার পর, নন্দকুমার নবাবের সহিত মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। মীর জাফরের দ্বিতীয় বার সিংহাসনে আরোহণের সময় নন্দকুমার খালসার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হন। এক্ষণে তিনি বঙ্গদেশের সর্ব্বময় কর্তা হইয়া উঠিলেন।
রাজা, জমিদার সকলে তাঁহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইতে লাগিলেন। নবাব কাশেম আলি খাঁ হিন্দু জমিদারদিগকে অত্যন্ত উৎপীড়িত করিয়াছিলেন, কাহাকে কাহাকেও মুঙ্গের দুর্গে কারারুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। ইংরেজদিগের সহিত তাঁহার ঘোরতর বিবাদ উপস্থিত হওয়ায়, রাজ্যমধ্যে রাজস্ব আদায়েরও বিলক্ষণ গোলযোগ উপস্থিত হয়। অনেকের রাজস্ব বাকী পড়িয়া যায়। পাছে, আবার জমিদারদিগের প্রতি অত্যন্ত অত্যাচার হয়, সেই জন্য তাঁহারা নন্দকুমারের শরণাগত হইলেন। নন্দকুমার দেখিলেন যে, জমিদারদিগের নিকট যত পাওনা রহিয়াছে, তাঁহারা • কখনও একেবারে তাহা পরিশোধ করিতে পারিবেন না।
সেই জন্য তিনি কতক ছাড়িয়া দিয়া কতক বা কিস্তি কিস্তি দেওয়ার বন্দোবস্ত করিয়া, তাঁহাদিগকে নিষ্কৃতি দিলেন। মীর কাশেমের সময় কোম্পানীর গৃহীত প্রদেশ ব্যতীত সমস্ত বঙ্গদেশে ২,৪১,১৮,৯১২ টাকা রাজস্ব বন্দোবস্ত হইয়াছিল। কিন্তু ১৭৬২-৩ খৃঃ অব্দে ৬৪,৫৬,১৯৮ টাকা মাত্র রাজস্ব আদায় দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার কারণ এই যে, মীর কাশেম অধিক পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি করিয়াছিলেন ও ইংরেজদিগের সহিত তাঁহার বিবাদ সংঘটিত হওয়ায় রাজ্যমধ্যে যে বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল, তজ্জন্য রাজস্ব আদায়ের পক্ষে নানারূপ বিঘ্ন ঘটিয়াছিল।
Leave a Reply