বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২০৬)

  • Update Time : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়নন্দকুমার সেই অতিরিক্ত করভারের লাঘব করিয়া ১৭৬৩-৪ খৃঃ অব্দে ১,৭৭,০৪,৭৬৬টাকা ও ১৭৬৪-৫খ্রঃ অব্দে ১,৭৬,৯৩, ৬৭৮ টাকা রাজস্ব বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু সে সময় পর্য্যন্তও বিপ্লবপীড়িত জমীদার ও প্রজাগণের অবস্থা ভাল না হওয়ায়, উক্ত দুই বৎসরে অনেক টাকা রাজস্ব বাকী থাকিয়া যায়। আমরা দেখিতে পাই যে, প্রথম বৎসরে ৭৬,১৮,৪০৭ ও দ্বিতীয় বৎসরে ৮১,৭৫,৫৩৩ টাকা মাত্র রাজস্ব আদায় হইয়াছিল। নন্দকুমারের রাজস্ববন্দোবস্ত মীরকাশেমের অপেক্ষা অল্প হওয়ায়, শত্রুগণ তাঁহাকে এই বলিয়া দোষ দিয়া থাকেন যে, তিনি জমিদার- দিগকে অব্যাহতি দিয়া নিজে অনেক টাকা লাভ করিয়াছিলেন।

অবশ্য তৎকালে রাজস্ববন্দোবস্তকার্য্যে বন্দোবস্তকারীর কিছু কিছু প্রাপ্য হইত বটে, কিন্তু নন্দকুমার প্রভুর ক্ষতি করিয়া জমিদারদিগের সহিত এরূপ বন্দোবস্ত কখনও করেন নাই। কারণ তাঁহার প্রভু মীর জাফর খাঁ তাঁহার সে বন্দোবস্তে অসন্তুষ্ট হন নাই। তিনি নন্দকুমারকে মৃত্যুর পূর্ব্বপর্যন্ত বিশ্বাস এবং তাঁহারই পরামর্শানুসারে কার্য্য করিয়া- ছিলেন। মীর জাফরের অর্থের প্রয়োজন নিতান্ত অল্প ছিল না।  এই অর্থের জন্য রাজা দুর্লভরাম ও শেঠদিগের যহিত তাঁহার বিবাদ উপস্থিত হয়।

সুতরাং জমিদারদিগকে বিনা কারণে অব্যাহতি দিলে, তিনি নন্দ- কুমারের প্রতি যে সন্তুষ্ট থাকিতেন, এ কথা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারি না। ইহার প্রধান কারণ এই যে, জমিদার ও প্রজাগণ মীর কাশেমের করভারে প্রপীড়িত এবং ১৭৬৩ অব্দের ঘোর বিপ্লবে অভি- ভূত হওয়ায়, নন্দকুমার করভারের লাঘব করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। তাঁহার পর মহম্মদ, রেজা খাঁও দেওয়ানীর প্রথম বৎসরে করভারের লাঘব করিয়াছিলেন।  সুতরাং নন্দকুমারের প্রতি দোষারোপ যে, তাঁহার শত্রুপক্ষের বিদ্বেষপ্রসূত তাহাতে সন্দেহ নাই। নন্দকুমারের প্রতি মীর জাফরের এরূপ বিশ্বাস ছিল যে, যত দিন পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন।

ততদিন নন্দকুমারকে রাজ্যের সর্ব্বময় কর্তা করিয়া রাখিয়াছিলেন। নবার তাঁহার প্রতি সমস্ত ভার দিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতেন।  নন্দকুমার তাঁহার স্বত্বাধিকারের জন্য ইংরেজদিগের সহিত ক্রমাগত তর্কবিতর্ক করিতে প্রবৃত্ত হন। ইংরেজেরা নবাবের ক্ষমতা হ্রাস করিয়া তাঁহাকে সাক্ষিগোপালের ভ্যায় রাখিতে চেষ্টা পাইতেন। নন্দকুমারও যাহাতে তাঁহাকে স্বাধীনভাবে, রাখিতে পারেন, তজ্জন্য অত্যন্ত চেষ্টা করিতেন। তিনি ইংরেজ- দিগকে নবাবের সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতে দিতেন না। এইরূপে নবাবের শাসনকার্য্যের উপর হস্তক্ষেপ লইয়া তাঁহার সহিত ইংরেজদিগের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিল। তিনি যতই প্রভুর পক্ষ অব- লম্বন করিয়া তাঁহার ক্ষমতা-বৃদ্ধির চেষ্টা পান, ইংরেজেরা ততই বাধা দিতে আরম্ভ করেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024