শ্রী নিখিলনাথ রায়তাঁহারা যাহা ইচ্ছা করিতেন, নন্দকুমার নবাবকে তাহা অস্বীকার করিতে পরামর্শ দিতেন। প্রায় দুই বৎসরকাল উভয়পক্ষের এইরূপ তর্কবিতর্ক চলিতে চলিতে নবাব মীর জাফর খাঁ ১৭৬৫ খৃঃ অব্দে মানবলীলা সংবরণ করিলেন। নবাব মীর জাফর খাঁ ‘নন্দকুমারের প্রতি এরূপ সন্তুষ্ট ছিলেন যে, তাঁহার অনুরোধে অন্তিমকালে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত পান করিয়া চক্ষু মুদ্রিত করেন এবং তাহাই তাঁহার শেষ জলপান।
নন্দকুমার যাঁহার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া ইংরেজ দিগের শত্রু হইয়াছিলেন, তাঁহার প্রাণত্যাগের পর তিনি অত্যন্ত ভগ্নোৎসাহ হইয়া পড়েন। ইংরেজেরা সুযোগ পাইয়া, তাঁহাকে দমন করিবার জন্য বিশেষরূপ যত্নবান্ হইলেন। মীর জাফরের প্রতি অনুরাগ ও স্বদেশের স্বত্বাধিকারের জন্য চেষ্টা করায় ইংরেজেরা যে তাঁহার ঘোরতর শত্রু হইয়া উঠেন, ইহা স্বয়ং হেষ্টিংস ও বার্কের স্তায় মহানুভব ইংরেজেরাও স্বীকার, করিয়াছেন। মীর জাফরের মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র নজম উদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার মসনদে বসিলেন।
নন্দকুমার তাঁহাদের বংশের হিতৈষী হওয়ায়, তিনি তাঁহাকে দেওয়ান রাখিবার জন্য কলিকাতা কাউন্সিলের নিকট অত্যন্ত অনুরোধ করিয়া- ছিলেন। কাউন্সিলের সভ্যেরা তাঁহাদের পরমশত্রু নন্দকুমারকে দেওয়ানী দিতে কিছুতেই স্বীকৃত হইলেন না। ইহার পূর্ব্বে ভান্সিটার্ট সাহেব বিলাত যাত্রা করিয়াছিলেন। ভান্সিটার্ট বিলাতে গেলে, ক্লাইব পুনর্ব্বার বাঙ্গলার গবর্ণর হইয়া আসিলেন। বিলাত যাওয়ার পূর্ব্বে ভান্সিটার্ট নন্দকুমারের বিরুদ্ধে এক কৌশল করিয়াছিলেন।
তজ্জন্য নন্দকুমারের হিতৈষী ও প্রতিপালক লর্ড ক্লাইবও তাঁহার উপর অসন্তুষ্ট হন। ভান্সিটার্ট যে সকল কাগজে নন্দকুমারের দোষের কথা লিপিবদ্ধ করেন, সেগুলি পুস্তকাকারে বাঁধাইয়া স্বীয় ভ্রাতা জর্জ ভান্সিটার্টকে দিয়া যান এবং কাউন্সিলে পাঠ করিতে অনুরোধ .. করেন। ক্লাইব উপস্থিত হইলে, ভান্সিটার্ট সেই পুস্তক কাউন্সিলে পাঠ * করিয়াছিলেন। তদবধি ক্লাইব নন্দকুমারের উপর এতই বিরক্ত হইয়াছিলেন যে, তাঁহার কোন উপদেশই শুনিতেন না।
Leave a Reply