শ্রী নিখিলনাথ রায়
তিনি নন্দ কুমারকে দেওয়ানী দেওয়া দূরে থাকুক, তাঁহাকে কলিকাতা হইতে নির্ব্বাসিত করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ক্লাইব মহম্মদ রেজা খাঁকেই নায়েব সুবার পদ প্রদান করিয়া জগৎশেঠ ও দুর্লভরামকে তাঁহার সাহায্যের জন্ম নিযুক্ত করিলেন। ভান্সিটার্টের লিখিত বিবরণে বিশ্বাস করিয়া ক্লাইং মনে করিয়াছিলেন যে, পাছে আবার নন্দকুমার বাদশাহ ও ফরাসীদের সহিত মন্ত্রণা করেন, তজ্জন্য তিনি তাঁহাকে কলি- কাতা হইতে স্থানান্তরিত করিয়া চট্টগ্রামে পাঠাইতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন।
এই সংবাদ শ্রবণে নন্দকুমারের পরিবারের মধ্যে এক বিষাদকোলাহল উপস্থিত হয়; নন্দকুমারও ভীত হইয়া পড়েন। সৌভাগ্যক্রমে একটিমাত্র কারণে তিনি সে যাত্রা নিষ্কৃতি লাভ করিতে সমর্থ হন। রাজা নবকৃষ্ণ কাউন্সিলের সভ্যদিগকে বলিয়াছিলেন যে, নন্দকুমারের চায় ষড়যন্ত্রকারী লোককে চট্টগ্রামের ন্যায় দূর দেশে পাঠাইলে, ভবিষ্যতে নানারূপ গোলযোগ ঘাঁটতে পারে। অতএব তাঁহাকে প্রহরিবেষ্টিত করিয়া কলিকাতাতে রাখাই আবশ্যক।
নবকৃষ্ণের সেই পরামর্শানুসারে ক্লাইব প্রভৃতি তাঁহাকে চট্টগ্রামে না পাঠাইয়া কলি- কাতায় প্রহরিবেষ্টিত করিয়া রাখেন। ইহাতে তাঁহার প্রতি নবকৃষ্ণের কিরূপ ভাব ছিল, তাহা সকলেই সুস্পষ্টরূপে বুঝিতে পারি- তেছেন। তাহার পর নন্দকুমার অব্যাহতি পাইয়াছিলেন। কোম্পানী বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করিলে, ক্লাইব মহম্মদ রেজা- ঝাঁকে নায়েব দেওয়ান নিযুক্ত করিলেন। পূর্ব্বে তিনি নায়েব সুবা হইয়া- ছিলেন; এক্ষণে আবার নায়েব দেওয়ান হইয়া বাঙ্গলার সর্ব্বেসর্ব্বা হইয়া উঠিলেন। তৎকালে নন্দকুমার ও মহম্মদ রেজা খাঁ উভয়েই উভয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
নন্দকুমার যেমন হিন্দুসমাজের নেতা ছিলেন, মহম্মদ রেজা খাঁও সেইরূপ মুসলমানসমাজে নেতৃত্ব করিতেন। এই দুইজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবশেষে বঙ্গদেশে ভয়ানক গোলযোগ উপস্থিত হয়। মহম্মদ রেজা খাঁ বাঙ্গলার সর্ব্বময় কর্তা হইয়া দেশে যেরূপ অরাজকতার প্রাদুর্ভাব বাড়াইয়াছিলেন, তাহা বঙ্গবাসিমাত্রেই অবগত আছেন। তাঁহার সেই অত্যাচারের ফল বঙ্গের করাল দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরে মন্বন্তরের নিদারুণ হাহাকার! আমরা পরে সে কথার উল্লেখ করিব।
Leave a Reply