জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেত থেকেই এসব সবজি স্থানীয় হাট বাজারসহ রাজধানী ঢাকাতে পাঠানো হচ্ছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দিনাজপুরের খাদ্যের জেলার হিসেবে সারাদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সেই সাঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে জেলার বীরগঞ্জসহ ১৩টি উপজেলায় ব্যাপক হারে শীতকালীন আগাম জাতের শাক-সবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, লাউ, ,ঝিঙ্গা,বটবটিসহ, শাক-সবজি চাষে কৃষকেরা সফলতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের মাহানপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৫০ শতক জমিতে ফুলকপি, ৩০ শতক জমিতে বাধা কপি ও ২০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছেন।
কৃষক আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি রবি মৌসুমের শুরুতে, আশ্বিন মাসে প্রথমে তার এক একর উঁচু জমির আগাম জাতের আমন ধান কর্তন করেন। ওই জমিতে পুনরায় হাল চাষ দিয়ে এ ৩ টি ফসল রোপণ করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তার পরামর্শে তার ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউয়ের জাঙ্গলায় নিজে এবং মজুরদের সহযোগিতায় পরিচর্যা শুরু করেন। বীজ রোপণে পর থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারজাত করার মত উপযুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে তার লউয়ের জাঙ্গলায় লাউ ধরেছে। এখন তার সবজি থেকেই স্থানীয় বাজারে পাইকারিরা ফুলকপি বাঁধাকপি ও লাউ নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন গত দু’দিন থেকে তার ক্ষেতের ফুলকপি বাঁধাকপি ও লাউ প্রতি বছরের মত এবারও ঢাকা কাওরান বাজার এবং গাজীপুর থেকে পাইকারেরা এসে নগদ টাকা দিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ নিয়ে যাচ্ছে। তার নিজের জমি থেকেই গতকাল বুধবার একট্রাক ভর্তি এ তিন ধরনের সবজি নিয়ে গেছেন ঢাকার পাইকারেরা। তার ক্ষেতে সবজির আগাম উৎপাদন হওয়ায়, দাম ভালো পাচ্ছেন। প্রতি কেজি ফুলকপি ঢাকার পাইকারেরা ৪২ টাকা কেজি ধরে নিয়ে গেছেন। বাঁধাকপি ৩৫ টাকা কেজি এবং লাউ পিস হিসেবে ২০ টাকার থেকে ৩৫ টাকা দামে পাইকারেরা নিয়ে গেছে। গত ১০ দিনে স্থানীয় বাজারে এবং গতকাল ঢাকার পাইকারের কাছেতিনি এক লাখ ৩০ হাজার টাকার এ ৩ ধরনের সবজি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, তার এক একর জমিতে, ফুলকপি বাঁধাকপি ও লাউয়ের জাঙ্গলা দেয়া ও বীজ রোপণ, পরিচর্যা, মজুরি খরচসহ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা সবজি বিক্রি হয়ে গেছে। এখনো মৌসুমের প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস তার ক্ষেতের ৩ ধরনের সবজি বিক্রি চলমান থাকবে। ঢাকা থেকে পাইকারেরা আগামী সপ্তাহে আবার আসবেন তার ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ নেওয়ার জন্য। তিনি আশা করছেন তার অর্জিত সবজি ক্ষেত থেকে ৫ লক্ষ টাকার অধিক এ তিন ধরনের শীত কালীন সবজি বিক্রি করতে পারবেন। তার খরচ বাদে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন।
সবজি চাষ নিয়ে কথা হয়, বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের পলাশবাড়ী গ্রামের রমানাথ রায় সঙ্গে তিনি বলেন, শীত কালীন আগাম জাতের বাঁধাকপি, ফুলকপি ও টমেটো চাষ করেছেন। এক একর ২০ শতক জমিতে এ ৩ ধরনের সবজি চাষ করেছেন। তার জমিতে এ ৩ টি সবজি ফসল বাজার জাত করা শুরু হয়ে গেছে। তার ক্ষেত থেকে আগাম জাতের টমেটো ঢাকার পাইকারেরা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে গতকাল বুধবার নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পাইকারেরা ফুলকপি ৪২ টাকা বাঁধাকপি ৩৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছেন। তিনি গতকাল পাইকারদের কাছে ৯০ হাজার টাকার এ৩ ধরনের সবজি বিক্রি করেছেন। মৌসুমের শুরুতে তার এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয়ে গেছে। তার জমিতে এ পর্যন্ত সবজি চাষে প্রায় এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । পুরো মৌসুমে তিনি তার সবজি ক্ষেত থেকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানান, দিনাজপুর একটি কৃষি সমৃদ্ধ জেলা হওয়ায় এখানে ধানসহ সব ধরনের রবি শস্য ব্যাপক হারে উৎপাদন হয়। কৃষকদের ফসলের দাম ভালো পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে, কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের ফসল লাগানো থেকে শুরু করে, শেষ পর্যন্ত সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
(বাসস)
Leave a Reply