বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৭৫)

  • Update Time : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতে আজকের ২৪ পরগণার উত্তরাংশে যশোর নদীয়াতে লোকবসতি ছিল। এসব এলাকা প্রধানত নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং বারুইপুরের মদন রায়দের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ছিল। কিন্তু দক্ষিণাংশের সুন্দরবন অঞ্চলে নতুনভাবে বসতি শুরু হয় ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির জমিদারিলাভের পর থেকে। মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে দক্ষিণবঙ্গের এক বিস্তীর্ণ এলাকা সেদিন ছিল জঙ্গল ও অনাবাদী জমি হিসাবে চিহ্নিত। বিভিন্ন সময়ে নবাবরা চেষ্টা চালিয়েছেন জমি উদ্ধার করে প্রজা বিলি করার মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির। তার ফলে প্রচুর জঙ্গলাকীর্ণ পতিত জমি সেদিন কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছিল এবং নতুন নতুন জনবসতি গড়ে উঠেছিল।

রাজসাহী, বর্ধমান, নদীয়ারাজদের এলাকা বাদ দিলে অসংখ্য জমিদারি গড়ে উঠেছিল জঙ্গলাবাদী জমি উঠিত করার তোলার ব্যাপারে নবাবি সনদের মধ্য দিয়ে। নদীয়া, বর্ধমান শেওড়াফুলী মুক্তগাছা ময়মনসিংহের জমিদারি এই সময়ে গড়ে উঠেছিল। এসব জমিদারির প্রতিষ্ঠাতারা নবাবের সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বাংলার ভূমিকে কেন্দ্র করে যে অভিজাততন্ত্র গড়ে উঠেছিল তা খুব প্রাচীন নয়-সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে এদের প্রতিষ্ঠাকাল। এসব জমিদারি তাঁরা পেয়েছিলেন নামমাত্র খাজনা অথবা নিষ্কর ভূমি হিসাবে।

মুর্শিদকুলির আমলের ভূমি রাজস্বের হার বিঘা প্রতি ১০ আনা বেড়ে কোম্পানির আমলে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে বিঘা প্রতি গড়ে দু’টাকা দাঁড়াল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রাক্কালে সুন্দরবনের এক বিশাল অংশ ছিল জঙ্গল। কোম্পানি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনে ঐ জমি দ্রুত উদ্ধার করার দিকে নজর দিলেন। পরবর্তী একশ বছর ধরে কোম্পানি জমি চাষযোগ্য করার ব্যাপারে জমিদারদের জমি দিয়েছে এবং তার বিনিময়ে প্রচুর রাজস্ব তারা সংগ্রহ করেছে। ক্লাইভের ২৪ পরগনার জমিদারি লাভের মধ্য দিয়ে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমি রাজস্বের ব্যাপারে ভাবনা শুরু হল। প্রথম থেকে কোম্পানি অত্যন্ত সতর্ক ছিল- কীভাবে কত বেশি টাকা জমির খাজনা বাবদ আদায় করা যায়।

তার জন্য ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পূর্বযুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তারা রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে কোম্পানি সরাসরি দেওয়ানি লাভ করল এবং তার কয়েক বছরের মধ্যে মানব ইতিহাসের অদৃষ্টপূর্ব দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নেমে এল। ইংরেজ লালসার বহ্নিতে ৫০ লক্ষ লোক মারা গেল, বাংলার তিনভাগের একভাগ এলাকা অনাবাদী হয়ে পড়ল। বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুধার জ্বালায় সন্তান বিক্রয় থেকে শুরু করে বুনো গাছের পাতা খেয়ে প্রাণ বাঁচানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার খবর জানা যাচ্ছে যা আনন্দমঠে বঙ্কিমচন্দ্র সামান্যই পরিবেশন করেছেন। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর পূর্ববৎসরের কোম্পানির রাজস্ব ছিল ১৫২০৪৮৫৬ টাকা। পরের বছর তা বেড়ে গেল বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাওয়া সত্ত্বেও এবং এ টাকা আদায়ের কৌশল হিসাবে হেস্টিংস উল্লেখ করেছেন-নতুন ট্যাক্স চাপানো হয়েছে তার নাম নাজায়। যাদের মৃত্যু হয়েছে অথবা যারা জমিজমা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছে তাদের দেয় ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে যারা বেঁচে আছে এবং ভিটেমাটি ছেড়ে পালায়নি তাদের কাছ থেকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024