কৃষি ও কৃষক
চতুর্থ অধ্যায়
ওয়াহাবি ও ফারজী কৃষকদের আন্দোলনের ফলে সরকার বাধ্য হল জমিদারদের অত্যাচার -এর বিরুদ্ধে কিছু কিছু আইন প্রণয়ণ করতে। কৃষি সংস্কারের প্রশ্নটা বেশী বেশী করে মানুষের সামনে ধরা দিল কিন্তু বিদেশি শাসক কৃষকের মৌলিক সমস্যা দূর করার ব্যাপারে কোন কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করলো না।
কৃষি ও কৃষকের সমস্যা জাতীয় সমস্যা এর সমাধানের চাবিকাঠি ভূমি সমস্যা সমাধানের মধ্যে নিহিত বিংশ শতাব্দীর সূচনাতে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সামনে ধরা পড়েছিল- The standard of living of the Indian peasants can not rise untill a change in the land system supplies the essential economic basis of more effective peasants farming.’ R.K. Mukherjee – Land problems of India.
কৃষিতে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ঘটিয়ে কিংবা সমবায় প্রথার মধ্য দিয়ে কৃষি ও কৃষকের সমস্যার সমাধান খুব একটা বেশি করা যাবে না এ জন্য প্রয়োজন আমূল ভূমি সংস্কার এ ধারণাটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল। ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে গোসাবা এলাকায় Hamilton সাহেব দরিদ্র মানুষের সামনে মানব কল্যাণের এক উজ্জ্বল কর্মসূচী উপস্থিত করেন। গড়ে ওঠে Bengal Youngmen’s Zamindary Co. Opt. Society, গোসাবা, রাঙাবেলিয়া, সাতজেলিয়ার প্রায় ২৫ হাজার বিঘা জমি নিয়ে গড়ে ওঠে এই বিশাল জমিদারি। স্কটল্যান্ডের হ্যামিলটন সাহেবের এই প্রকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সমর্থন লাভ করে। হ্যামিলটন সাহেব সন্ত্রাসবাদী যুবকদের দেশগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করানোর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্য নিয়ে আসার কথা সরকারের নিকট পেশ করলেন।
সেদিন হ্যামিলটন ঘোষণা করেছিলেন- ‘India has something better to offer to the World than any of the ism of the West ……….. India’s road to independence runs through Gosaba with its sound men and standard finance.’ হ্যামিলটন সাহেবের উৎসাহ ও আন্তরিকতার অভাব ছিল না। গোসাবাতে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা নিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে গোসাবা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হল সমবায়ের ভিত্তিতে। তাঁর জমিদারির বিভিন্ন গ্রামে এই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হল। সমবায়ভিত্তিতে গ্রামের মানুষদের উৎসাহিত করে ব্যাঙ্ক ধর্মগোলা, শিক্ষাস্বাস্থ্য প্রভৃতির ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেন। ১৯৩১ সালের সেন্সাসে লক্ষ করা গেল গোসাবায় শিক্ষার হার সারা বাংলার গড় হিসাবের চাইতে অনেক বেশি।
Leave a Reply