বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৯৩)

  • Update Time : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

‘১৯৪৬- এর কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তিনমাস পরে এবং নোয়াখালির দাঙ্গার একমাসের মধ্যে বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শুরু হল ভাগচাষি আধিয়ারদের তেভাগার লড়াই বাংলার কৃষক আন্দোলন ও সংগ্রামে এ আন্দোলন নতুন কৃষক আন্দোলনের নেতারা এর ব্যাপকতা আন্দোলনের শুরুতে অনুধাবন করতে পারেননি পরবর্তীকালে অনেকে তা স্বীকারও করেছেন। বিভিন্ন সময়ে রায়ত চাষিরা আন্দোলন করেছেন কিন্তু এ লড়াই- এর কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এল কৃষিব্যবস্থার সবচেয়ে তলাকার মানুষ ভাগচাষিরা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কৃষির ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল তা ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশিত হল ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে। কৃষিব্যবস্থার এই কাঠামোগত পরিবর্তন (Structural Change) আমাদের অর্থনীতিবিদদের নজরে আসেনি।

১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে কংগ্রেস পার্টির ছত্রছায়ায় সারা ভারত কৃষক সভা জন্মলাভ করলেও সমিতির নেতৃত্ব ভাগচাষি জোতদারদের সম্পর্কের বিষয়টা প্রথমদিকে অবহেলা করেছেন। কৃষক ঐক্যের স্বার্থে তাঁরা দাবি তুলেছিলেন জমি পূর্ণবন্টনের। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের, সেচ সার ফসলের দাম ও কৃষির ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি নিয়োগের। প্রিস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কৃষির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মধ্যসত্ত্বভোগীদের অধিকার সম্প্রসারিত হয়েছে। শহুরে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা জমিতে পুঁজি নিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে, গ্রামের সুদখোর মহাজনরা কৃষকের দুর্দশার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত রায়তচাষির জমি গ্রাস করছে তা সারা বাংলার পাশাপাশি সুন্দরবনের বিভিন্ন জেলা গেজেটিয়ারগুলিতে লক্ষ করা যাচ্ছিল

২৪ পরগণা জেলা গেজেটিয়ারে O.S.Malley মন্তব্য করেছেন Lands and Villages passed into possession of Land grabbers, Lawyers traders and capitalists’, অবশ্য এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় জোতদারদের মধ্যে জোতের পার্থক্য ছিল কেউ ছিল ছোট জোতদার আবার কেউ ছিল বড় জোতের মালিক। ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দে ল্যান্ড রেভিনিউ কমিশন লক্ষ করেছেন এই সময়ে দ্রুত হারে বর্গাচাষির সংখ্যা সারা বাংলায় বেড়ে যাচ্ছে; বংশানুক্রমিক চাষিরা ক্রমান্বয়ে গরিব থেকে গরিব হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ হয়ে ভাগচাষি ও ক্ষেতমজুরে পরিণত হচ্ছে।

সমগ্র কৃষিজমির মধ্যে শতকরা ২১.১ জমিতে বর্গাচাষিরা চাষ করেছিল বলে যে হিসাব ল্যান্ড রেভিনিউ কমিশন দিয়েছিলেন তা অনেক অর্থনীতিবিদ সঠিক বলে মনে করেননি। এই হিসাব এর চাইতে অনেক বেশি জমি বর্গাচাষের আওতায় এসেছিল বলে তাঁরা মনে করেন। কমিশন স্যাম্পেল সার্ভের ভিত্তিতে জেলাওয়ারি শতকরা এই হিসাব পেশ করেন। –

হাওড়া    ২৩.৪

জলপাইগুড়ি   ২৫.৯

মালদা     ৯.৬

মেদিনীপুর   ১৭.১

মুর্শিদাবাদ   ২৫.৮

ময়মনসিংহ  ১০.৩

নদীয়া   ২৪.১

পাবনা  ১৯.৪

রাজসাহী   ১৫.০

রঙপুর  ২২.৮

যশোর   ২২.১

খুলনা  ৫০.২

বাঁকুড়া  ২৯.২

বীরভূম   ২৪.৮

বগুড়া   ১৬.০

বর্ধমান   ২৫.২

চট্টগ্রাম   ১১.৯

ঢাকা    ২২.৯

দিনাজপুর  ১৪.৫

ফরিদপুর  ১১.৪

ত্রিপুরা  ১২.৪

হুগলী   ৩০.৫

২৪ পরগণা   ২২.৩

বাখরগঞ্জ  ৪৪.৭

গড় হিসাব ২১.১%

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024