সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৯৭)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় অনুচররা আতঙ্কিত হল, সামন্ততন্ত্রের ভিত কেঁপে গেল; সরকার ও প্রশাসন অনুধাবন করল তারা একটা ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে। অনেক সময় আধা মিলিটারি বাহিনী নামিয়ে কৃষকদের জঙ্গি মেজাজ ঠান্ডা করা গেল না। আন্দোলনের তীব্রতা অনুধাবন করে তৎকালীন লীগ সরকার বর্গাচাষিদের স্বার্থরক্ষাকারী বেঙ্গল বর্গাদার টেম্পোরারি রেগুলেশন’ বিল আনতে বাধ্য হলেন ১৯৪৭ এর মার্চে কন্তু পরবর্তীকালে কিছুই করা হল না।

তেভাগা আন্দোলনের শুরুটা সুন্দরবনের বিভিন্নপ্রান্তে এভাবে আরম্ভ হয়। ২৪ পরগণার সাগর থেকে ফলতা পর্যন্ত অপর দিকে বরিশাল থেকে খুলনা যশোরে এ কৃষক মিতি তৎকালীন কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পরিচালিত হত। অবশ্য এদের সাহায্য করতেন সে যুগের অনেক মানুষ যারা সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ডঃ ভূপেন দত্ত, নৌসের আলি, খন্দকার উকিলদ্দিন, আব্দুল হক, সৌমেন ঠাকুর, বিশ্বনাথ দূবে, নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার, সহজানন্দ সরস্বতী, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ জাতীয়তাবাদী সাম্যবাদী নেতারা থাকলেও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণ কর্মীরা, এরা সকলেই স্কুল কলেজের শিক্ষার মধ্য দিয়ে সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষা গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কিছু আগে থেকে খুলনা যশোরের নানা জায়গায় কৃষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা লক্ষ করা গেল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন পরবর্তীকালে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সন্ত্রাসবাদীরা থেকে শুরু করে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা হলেও তা গ্রামের কৃষকদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারেনি, এসব আন্দোলন শহরের মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, গ্রামের সাধারণ কৃষকের ক্ষেত্রে এ আন্দোলন খুব বেশী প্রভাব ফেলতে পারেনি। যশোর জেলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমকালে সৈয়দ নৌসের আলি, ওয়ালিয়র রহমান, কৃষ্ণ বিনোদ রায়, শান্তিময় ঘোষ, প্রমথ ভৌমিক এবং খুলনা জেলার কৃষক অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামে বিষ্ণু চ্যাটার্জী, খোকা বসু, খন্দকার উকীলদ্দীন কৃষকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করতেন- এদের সাহায্য করার জন্য কলকাতা থেকে আবদুল্লাহ রসুল, নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার, ডঃ ভূপেন দত্ত, বঙ্কিম মুখার্জী, শ্রমিক নেতা শিবনাথ ব্যানার্জী এসব এলাকায় যোগাযোগ রাখতেন (১৫) ১৯৩৯-৪০- এর দিকে হাটতোলা বন্ধের আন্দোলন কৃষকদের মধ্যে দ্রুত সাড়া ফেলে।

খুলনার ফকিরহাট থানার ফকিরহাট, মনসাবাজারহাট, মোল্লাহাটের চুনখোলাহাট, নত্তবেকি, আসাশুনির হাটে এ আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে। ডুমুরিয়া থানার চুকনগর হাটের তোলাবন্ধ আন্দোলনে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর বিরুদ্ধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন খুলনার কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করে। কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাদের শক্তি সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচারের পাশাপাশি নানাধরণের জনকল্যাণমূলক কাজ, নদীরবাঁধ, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, খালকাটার আন্দোলন, জলনিকাশী ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩-৪৪ এ খুলনার মৌভোগে বড়জলা খালকাটার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কৃষকসমিতির নেতারা জনমানসে বিশেষ শ্রদ্ধার আসন লাভ করেন।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024