বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০৮)

  • Update Time : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

চ) শিক্ষা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা ছিল আদিম স্তরের। লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য মুষ্টিমেয় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনেক থানায় কোন মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ও ছিল না। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসালয় যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। এক ব্যাপক অংশের মানুষ প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিল্পপতি কর্মবীর রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জি মন্তব্য করেছিলেন- For want of elementary education the artisan and craftsman classes even if they had the necessary capital, can not appreciate the advantage of introducing machinery to cheapen the cost of production. (১৯) বিষয়টা কুটির শিল্পীদের ক্ষেত্রে শুধু নয় এমনকী কৃষকরাও প্রাথমিক শিক্ষার অভাবে উন্নত প্রথায় চাষাবাদও গ্রহণ করতে পারে না।

ছ) সুন্দরবনের অসংখ্য নদীতে এত জল থাকতে তা চাষের কাজে লাগানো অসম্ভব। বর্ষাকালে প্রচুর জল নদীতে চলে গিয়ে তা লোনা জলে পরিণত হয়- ফসলের কাজে এ বিপুল জলধারাকে ব্যবহার করা যায় না। ১৯৪১ সালে লক্ষ করা যাচ্ছে সুন্দরবনের সবটাই প্রায় একফসলি জমি। বর্ষাকালে আমন ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল করা যায় না।

দুটো ফসল হয় এমন কোন জমির সন্ধান এ সময় সন্দেশখালি, ক্যানিং, জয়নগরে পাওয়া যাচ্ছে না। কেবলমাত্র মথুরাপুর থানার কৃষিযোগ্য জমির শতকরা ৬ শতাংশ জমিতে দু ফসল হয়। শীতকালে সেচের জল না পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকাতে শীতকালীন কোন ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে সুন্দরবনের কৃষক সভ্যতার সমস্ত আশীর্বাদ থেকে সে ছিল বঞ্চিত। এমন এক সময়ে ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে সে দু দেশে ভাগ হয়ে গেল এবং নতুন এক অবস্থার মধ্যে সে প্রবেশ করল। কিন্তু কৃষকের জীবনের এই সমস্যাগুলি তার সামনে আশু সমাধানের বিষয় হয়ে দাঁড়াল। অনেক কান্না ঘাম রক্তের মধ্য দিয়ে বহু আকাক্ষিত স্বাধীনতা এল।

সুন্দরবনের মানুষ স্বপ্ন দেখল নতুন এক জীবনের যেখানে তার দীর্ঘকালের অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাবে। দেশের সামনে কৃষিসমস্যা বর্শা ফলকের মতো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। স্বাধীনতা মানে বাঁশ দড়ি ও একটা কাপড়ের পতাকা উত্তোলন নয়। জীবনের অনেক কিছু মৌল পরিবর্তন এর সাথে জড়িয়ে আছে। নতুন নতুন প্রত্যাশা জাগল সুন্দরবনের কৃষকের জীবনে যেখানে বর্শা হবে বাঁশি, কান্না হবে আলো, নোনা জলে সাঁতার কেটে একদিন মিষ্টি জলের মোহনায় পৌঁছে যাবে সবাই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024