ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
জীবিকা: লবণ উৎপাদন
মায়া জনসমাজের পেশা কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বাণিজ্য ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল। এই উপাদান হল লবণ (Salt)। উপকূলবর্তী অঞ্চলে লবণের মূল উপাদান সংগ্রহ করা হয়। এরপর সমসাময়িক কালের দেশজ পদ্ধতিতে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সম্পূর্ণভাবে ‘লবণ’ নামক পণ্যে পরিণত হয়। এই ‘লবণ’কে খাদ্য হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করেন মায়ারা।
একটি হিসেব থেকে জানা যায় একজন মায়া দিনে ৪ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। মায়াদের অঞ্চল তিকাল (Tikal)-এ ৪৫ হাজার মানুষের বাৎসরিক লবণ ভোগ-এর পরিমাণ কমবেশি ১৩১.৪ টন। মায়ারা লবণকে কেবল খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত না। মায়ারা অন্যান্য বাণিজ্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংরক্ষণ-এর কাজেও লবণ ব্যবহার করে। এক কথায় বলা যায় ক্লাসিক ও ক্লাসিক-উত্তর যুগে দ্বীপবাসী জনগণ লবণাক্ত স্বাদের ব্যবসা করতেন। মার্গারেট রেডফিল্ড-এর মন্তব্য অনুসরণ করে বলা যায় লবণ-এর ব্যবহার রোগ উপশমেও কাজে লাগত।
মৃগীরোগ এবং প্রসব যন্ত্রণার সময় লবণের বিশেষ ব্যবহার করা হত। লবণের এই নানাবিধ ব্যবহার, উপযোগিতার তাগিদে এই শিল্পর সূচনা হয়েছিল। এবং সমুদ্রর তীর থেকে কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ করে লবণ তৈরির নানা স্তরে কাজ করত ইউকাতান সহ মায়া প্রদেশের জনসাধারণ। এ প্রসঙ্গে একথাও বলা হয় যে লবণ শিল্প এবং বাণিজ্য এক দিনে বেড়ে ওঠেনি। একথা সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ক্লাসিক মায়া যুগে জনসংখ্যার একটি মাত্রায় পৌঁছনর পরেই লবণ শিল্পের সমৃদ্ধি ঘটেছিল। এই মতের সারবত্তা আছে কেননা লবণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির যোগান সম্ভব হয়েছিল এই বাড়তি জনসংখ্যা থেকেই।
সমসাময়িক কালের তথ্য থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে এই লবণ শিল্পের সঙ্গী হিসেবে ছিল পলিক্রম মাটির পাত্র এবং অন্যান্য পণ্য। উভয় শিল্পের বৃদ্ধির তাগিদ উভয়কে সাহায্য করেছিল। লবণ ও মাটির পাত্র এবং অন্যান্য শিল্প সমৃদ্ধির কালেই উপকূলবর্তী শহর চুনচুকমিল (Chunchucmil), তেমে (Tzeme) এবং দুবিলচালিনিন (Dubilchalinin) শহরের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। এই শহরগুলির লোকসংখ্যা দশ হাজার থেকে বেড়ে চল্লিশ হাজারে পৌঁছেছিল।
(চলবে)
Leave a Reply