শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন

ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির পুনরুত্থান: ট্রাম্প যুগের সম্ভাবনা

  • Update Time : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৫.০৭ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় শুধু তার নিজের প্রতিশোধের স্বাদ নয়, বরং ক্রিপ্টো ব্রো এবং তাদের পছন্দের সম্পদের জন্যও। নির্বাচনের রাতে, যখন নিশ্চিত হয়ে যায় যে মি. ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন, তখন বিটকয়েনের দাম ১০% বেড়ে যায়। ১৩ নভেম্বর, যখন রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে, বিটকয়েনের দাম $৯৩,০০০-এর উপরে পৌঁছে যায়। মধ্য অক্টোবর থেকে এটি প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু বিটকয়েনই নয়, অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মূল্যও দ্রুত বেড়েছে। ডোজকয়েন, একটি মিম কয়েন যা ইলন মাস্কের সমর্থন পায়, নির্বাচনের দিন থেকে ১৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের মূল্য $৩ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়েছে।

২০২২-২৩ সালে যখন একাধিক কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার তলানিতে পৌঁছেছিল, তখন এই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। তখন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে বাজারের জল্পনা কমিয়েছিল। এফটিএক্সের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পতন এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রকদের কঠোর পদক্ষেপ ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিকে চাপে ফেলে।

২০২৩ সালের শেষ দিকে, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়, তখন ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রি নতুন সুযোগ দেখতে পায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির একজন উগ্র সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি বিশ্ব লিবার্টি ফিনান্সিয়াল নামে একটি প্রকল্প প্রচার করেন এবং আমেরিকাকে “বিশ্বের বিটকয়েন সুপারপাওয়ার” করার প্রতিশ্রুতি দেন।

নির্বাচনের প্রচারাভিযান চলাকালে তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান গ্যারি গেনসলারকে বরখাস্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। গেনসলার ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়ে সন্দিহান এবং এই ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতারণামূলক আখ্যা দেন। তার তত্ত্বাবধানে এসইসি ক্রিপ্টো সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়মনীতি আরও সহজ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোকে সিকিউরিটি হিসেবে বিবেচনা না করে স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তবে, ট্রাম্পের এই সমর্থন দীর্ঘদিনের নয়। ২০২১ সালে তিনি বিটকয়েনকে “ডলারের বিরুদ্ধে প্রতারণা” বলেছিলেন। তাই তার প্রশাসনে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই এখনো সন্দিহান। ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়মনীতি সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার অতীত মন্তব্য এবং ক্রিপ্টো নিয়ে তার সাম্প্রতিক অবস্থানকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন।

সিকিউরিটি বনাম কমোডিটি: নিয়ন্ত্রকদের সংঘর্ষ

ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসইসি এবং কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশন (সিএফটিসি)-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে। উদাহরণস্বরূপ, ইথার নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি একসময় উভয় সংস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দাবি করেছিল। পরে এসইসি তার দাবি ছেড়ে দেয়। একইভাবে, বিটকয়েনকেও একটি কমোডিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মের স্বচ্ছতার গুরুত্ব

বিনিয়োগকারীরা বিশেষত প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একটি নির্ভরযোগ্য সম্পদ শ্রেণি হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু নিয়মের অনিশ্চয়তা এবং ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান বিতর্ক তাদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে। এসইসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান গ্যারি গেনসলারের কঠোর নীতির কারণে অনেক ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠান বিশাল পরিমাণে আইনি খরচ বহন করতে এবং নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হয়েছে।

জল ঘোলা করার সুযোগ

ক্রিপ্টো লবিস্টরা ট্রাম্পের প্রশাসনকে তাদের পক্ষে টানতে শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে। তারা আশা করছে, ট্রাম্পের অধীনে নিয়ন্ত্রক কাঠামো আরও নমনীয় এবং স্পষ্ট হবে। তবে, এই আশার ভিত্তি কতটা মজবুত, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সহজ করা, নিয়মের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু এর জন্য সঠিক নেতৃত্ব, কার্যকরী নীতি এবং ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমে আস্থা বাড়ানো প্রয়োজন।

বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদী লড়াই, যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সব দিক থেকেই সমর্থন প্রয়োজন। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024