সারাক্ষণ ডেস্ক
নাগাল্যান্ডে বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো দীর্ঘদিন ধরেই একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। রাজ্যের ২.২ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বাস করে, যেখানে সড়ক যোগাযোগ খারাপ, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিশ্চিত এবং পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি থাকার কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সংখ্যা খুব কম, যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে ২০১৮ সালে নাগাল্যান্ড স্বাস্থ্য প্রকল্প শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। রাজ্যের ১৮৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যকারিতা উন্নত হয়েছে, এবং এখন ৮,৩৬,০০০ জন মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
থোনোকনিউর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যা রাজধানী কোহিমা থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে, আগে খুব কম রোগী দ্বারা পরিদর্শন করা হতো। এখন, পুরনো বিল্ডিংটি সংস্কার করা হয়েছে এবং নতুন পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
ফার্মাসিস্ট পেহি জানান, “লেবার রুম, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা, উন্নত ড্রেনেজ ও বায়োমেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক বেশি মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন।”
নাগাল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে স্থানীয় কমিউনিটিকে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০০২ সালের কমিউনিটাইজেশন আইনের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় গ্রাম স্বাস্থ্য কমিটিগুলি পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিটি কমিটিতে একজন নারী সহ-সভাপতি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের ৫০০টি গ্রাম স্বাস্থ্য কমিটিতে একজন নারী সহ-সভাপতি রয়েছেন।
মেহুলি গ্রামের কমিটির সহ-সভাপতি মিসেস ঝিতো বলেন, “এই প্রকল্প আমাদের শিখিয়েছে যে স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি গ্রামবাসীদেরও সম্মিলিত দায়িত্ব।”
চিকিৎসা শিক্ষা উন্নয়ন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের ঘাটতি মোকাবিলায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি স্কুলগুলির কার্যকারিতা উন্নত করা হয়েছে। পাঁচটি নার্সিং স্কুলে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
অনিশ্চিত বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা সমাধানে ১৭৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সার্জারি ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।
পেরেন জেলা হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভিজোনুও থাপ্রি বলেন, “সোলার প্ল্যান্ট থেকে ২৪x৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া এখন রোগীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি।”
পরীক্ষা ও ডায়াগনস্টিক সুবিধা
এখন রোগীদের সাধারণ মেডিকেল পরীক্ষার জন্য দূরবর্তী স্থানে যেতে হয় না। উদাহরণস্বরূপ, চুনলিখা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বৃষ্টির পানি সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতি বছর ৭০-৮০ লাখ লিটার পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা ১৭৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাহিদা মেটাচ্ছে। এছাড়া, বৈজ্ঞানিক বায়োমেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ সংক্রমণ কমানো সম্ভব হয়েছে।
ডিজিটাল উদ্ভাবন
ড্রাগ ও মেডিকেল সরঞ্জামের মজুদ ব্যবস্থাপনা সহজ করতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে।
এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সমর্থিত নাগাল্যান্ড স্বাস্থ্য প্রকল্প স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে।
Leave a Reply