ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়াদের মধ্যে ছেলেরা মধু দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের পানীয় তৈরি করত। এই পানীয় তৈরির কৌশলটি হল এরকম: প্রথমে বালচে গাছের ছাল ছেঁটে বার করা হয়, এই চালচেকে নরম করে টাটকা মধু এর সঙ্গে যত্ন করে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই মধু মেশানোর সময় আর টাটকা থাকে না। কেননা মধুকে দু’একদিন মোটামুটি গরম আবহাওয়ায় রেখে কিছুটা মজিয়ে বা পচিয়ে নেওয়া হয়।
এই পচা মধু বালচের (Balche) সঙ্গে মেশানোর পর অনেকটা এখনকার বাংলা মদ বা আদিবাসীদের হাড়িয়ার মত খেতে লাগে। এই বিশেষ ধরনের পানীয় প্রস্তুত করার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে পুরুষদের অংশগ্রহণ এক ধরনের সমবেত আনন্দের পরিবেশ তৈরি করে। এই ধরনের কাজে অনেক সময় যেমন পরিবারের সদস্য/ সদস্যরা নিযুক্ত হয়। আবার অন্যদিকে পেশা বা টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেবার প্রথাও ছিল।
অর্থাৎ আর্থ-বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার ধরন দেখে আমরা বুঝতে পারি মায়া জনসমাজে পেশা বা জীবিকার গোটা আদলটাই ছিল এই কৃষিকাজ বা গবাদি পশু বা ভুট্টা উৎপাদনকে কেন্দ্র করে। পেশা বলতে বা জীবিকা অর্থে আমরা আধুনিককালের চাকরি বা শিল্পকেন্দ্রিক নগরাঞ্চলের রুটি-রোজগারের পথ বুঝি তা মায়াযুগে একদম ছিল না বললেই চলে।
একথার যাথার্থ্যতা আমরা অনুভব করতে পারব গ্রামাঞ্চলে মায়াদের ইঁদুর, হরিণ এবং অন্যান্য প্রাণী শিকার করে খাওয়ার মধ্য দিয়ে। অবশ্য অনেক সময় হাঁস, বড় আকারের পাখি, কুকুর এদের গৃহপালিত পশু হিসেবেও রাখা হয়।
(চলবে)
Leave a Reply