ফারিদের গ্লোবাল ব্রিফিং
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলছে কপ২৯ বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন, কিন্তু হতাশার কারণগুলো চারদিকে ছড়িয়ে আছে।
“আলোচনাগুলো বয়কট, রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উদযাপনে পরিণত হয়েছে,” উল্লেখ করেছেন সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট সম্পাদক অ্যাঞ্জেলা ডিওয়ান। নিউজউইকের জন্য লিখতে গিয়ে টারা পেট্রোভিচ, সিভিকাস মনিটরের সদস্য, মন্তব্য করেছেন যে কপের একটি তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী দেশে আয়োজন হওয়া একটি হতাশাজনক বিদ্রূপ। “এই সম্মেলনের বৈধতা নিয়ে সংশয় শুরু থেকেই ছিল,” পেট্রোভিচ লিখেছেন। “দুবাইয়ের মতো, আজারবাইজানও একটি বৈশ্বিক মিটিং ব্যবহার করছে নিজেদের সবুজ ইমেজ দেখানোর জন্য।”
এই সম্মেলনের ওপর আরেকটি বড় ছায়া পড়েছে—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া। তার প্রথম মেয়াদে আমেরিকাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি এবং মার্কিন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন নিয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিয়েছিলেন।
ব্লুমবার্গ কলামিস্ট লিয়াম ডেনিং লিখেছেন, “ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা লি জেলডিন ‘এনার্জি ডমিন্যান্স’ ঘোষণা করেছেন, যা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।”
চীনের প্রস্তুতি ট্রাম্প ২.০ এর জন্য
বেইজিংয়ের পছন্দের প্রার্থী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তবুও, কিছু চীনা পর্যবেক্ষক ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসকে একই রকম বলে মনে করেন। ট্রাম্পের জয়ে চীনের সরকারি বিবৃতি আপাতদৃষ্টিতে সমন্বয়পূর্ণ হলেও, কঠোর প্রচার মাধ্যম আমেরিকার প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্পের “অপূরণীয় এবং প্রচলিত নিয়ম ভাঙার” ধরন চীনা জনগণের কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেন যুদ্ধ ট্রাম্পের ছায়ায়?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রুশ রাজনীতি বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্টানোভায়া লিখেছেন, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন মস্কোর জন্য স্বয়ংক্রিয় বিজয় নয়। ইউক্রেন জানে, ওয়াশিংটন হয়তো সামরিক সহায়তা হ্রাস করতে পারে, তবে সহজেই রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
তথ্যের পরিবেশ এবং ট্রাম্পের জয়
মাইকেল টমাস্কি লিখেছেন, ডানপন্থী মিডিয়ার প্রভাব ট্রাম্পের বিজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন মূলধারার মাধ্যম এবং যেখানে মিম এবং প্রবণতা রাজত্ব করে।
ইনফোওয়ার্স বিক্রিত হয়েছে
ইনফোওয়ার্স স্যান্ডি হুক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা দাবি করার জন্য দায়বদ্ধতার মুখে নিলামে বিক্রি হয়েছে। বিজয়ী হলো ব্যঙ্গাত্মক সংবাদপত্র দ্য অনিয়ন।
এই ঘটনাগুলো দেখায় যে বিশ্ব রাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার জটিলতা কতটা গভীর এবং সমাধানের জন্য কী পরিমাণ উদ্যোগ প্রয়োজন। এই সকল ঘটনা তুলে ধরে, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতি, জলবায়ু সংকট এবং তথ্যের পরিবেশের ওপর যে চাপ পড়েছে তা স্পষ্ট হয়।
কপ২৯-এর ভবিষ্যৎ এবং পরিবর্তনের আহ্বান
বাকুতে কপ২৯-এর মতো জলবায়ু সম্মেলনগুলো বড় মঞ্চ তৈরি করে, যেখানে বৈশ্বিক নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যে বড় ফারাক রয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন একটি তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ সম্মেলনের আয়োজক, তখন এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই স্বাভাবিক।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সম্ভাব্য প্রভাব, সস্তা সবুজ জ্বালানির উত্থান এবং বৈশ্বিক শক্তির অর্থনৈতিক প্রবণতাগুলো এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও ট্রাম্পের নীতিগুলো পরিবেশগত পরিবর্তনকে ধীর করবে, তবুও তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে না।
চীন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক
চীনের নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে দ্বন্দ্বপূর্ণ চীন নীতি চীনাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এবার তারা একই ধরনের অস্থিরতা এবং অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর নির্ভর করবে। চীন তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্বপূর্ণ নীতি এই প্রচেষ্টায় বাধা দিতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক ভূমিকা
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা এবং নীতিগুলো কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ইউক্রেন আশা করছে, তারা শক্তিশালী অবস্থান থেকে যুদ্ধ শেষ করতে পারবে। তবে পশ্চিমা নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমন্বয় এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
মিডিয়া এবং তথ্য প্রবাহ
ট্রাম্পের জয়ে ডানপন্থী মিডিয়া যেমন ফক্স নিউজ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়া এখন শুধু খবরের মাধ্যম নয়, এটি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে।
ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হওয়া
জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তথ্যযুদ্ধে একটি স্পষ্ট সমাধানের পথ বের করা কঠিন। তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক নেতাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তথ্যপ্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যেই বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। এখন সময় এসেছে প্রতিটি দেশ এবং জনগণের একত্রিত হওয়ার এবং একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার।
Leave a Reply