সারাক্ষণ ডেস্ক
সূর্যমুখী গাছ একটি পরিচিত বাগান উদ্ভিদ, যার বড় হলুদ ফুল রয়েছে। এটি এর বীজ এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তেলের জন্য চাষ করা হয়। যদিও এটি উত্তর আমেরিকার দেশীয় উদ্ভিদ, বর্তমানে এটি বহু দেশে চাষ করা হয়। সূর্যমুখী পৃথিবীর চতুর্থ সর্বাধিক জনপ্রিয় ফসল।
সূর্যমুখী তেল সূর্যমুখীর বীজ থেকে নিষ্কাশিত হয়। এটি রান্না, বায়োফুয়েল এবং ব্যক্তিগত যত্ন পণ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেল এবং খাদ্য সামগ্রীর উচ্চ চাহিদার কারণে সূর্যমুখীর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। সূর্যমুখী তেলের ধোঁয়া-তাপমাত্রা বেশি এবং এটি ভিটামিন ই-এ সমৃদ্ধ। এটি উচ্চ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত, যা অন্যান্য রান্নার তেলের বিকল্প বা ভাজাতে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এখন আসুন জেনে নিই সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলো সম্পর্কে।
ইউক্রেন
দশকের পর দশক ধরে সূর্যমুখী তেল ইউক্রেনের খাদ্যাভ্যাসের একটি প্রধান উপাদান। এখানে বিশ্বের বৃহত্তম সূর্যমুখীর ক্ষেত রয়েছে, যা প্রতি বছর ১০ লাখ টন সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে। দেশটি প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ সূর্যমুখী বীজ উৎপাদক। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ সূর্যমুখী তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। দেশের উৎপাদন ২০ লাখ টন থেকে কমে ১০ লাখ টনে নেমে এসেছে।
রাশিয়া
রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম সূর্যমুখী তেল উৎপাদকদের মধ্যে একটি। দেশটি প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন টন তেল উৎপাদন করে। ২০১০ সাল থেকে রাশিয়ার সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার পণ্যের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা।
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনায় সূর্যমুখী তেল উৎপাদন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থিরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক, যার বার্ষিক গড় উৎপাদন ৯৩০ হাজার টন। এই সংখ্যা ২০২২ সালে ১৫ লাখ টনে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হয়েছিল। সরকারের প্রণোদনা এবং রপ্তানি বাজারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন বাড়ছে।
তুরস্ক
তুরস্ক সূর্যমুখী তেলের চতুর্থ বৃহত্তম উৎপাদক। দেশটি প্রতি বছর ৭২১ হাজার টন সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে। গত এক দশকে তুরস্কে সূর্যমুখীর উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তেলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সূর্যমুখী বীজের দাম কমার কারণে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
ফ্রান্স
ফ্রান্স বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সূর্যমুখী তেল উৎপাদক, যা প্রতি বছর প্রায় ৬৩০ হাজার টন তেল উৎপাদন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রান্স সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধি করেছে।
হাঙ্গেরি
হাঙ্গেরি দীর্ঘদিন ধরে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে দেশটি প্রতি বছর ৫৬৬ হাজার টন সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে, যা এটিকে ষষ্ঠ বৃহত্তম উৎপাদক হিসেবে স্থান দিয়েছে।
স্পেন
স্পেন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদনে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় এবং সূর্যমুখী তেলের শীর্ষ উৎপাদকদের মধ্যে রয়েছে। ২০২২ সালে স্পেন ৫ লক্ষ ৩ হাজার টন তেল উৎপাদন করেছে।
রোমানিয়া
রোমানিয়া ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ সূর্যমুখী তেল উৎপাদক। দেশটি প্রতি বছর ৪৫৫ হাজার টন তেল উৎপাদন করে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে এটি ১০ লাখ টন রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়া বছরে ৩২০ হাজার টন সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে। তেল উৎপাদনের অধিকাংশই কালো সাগরের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আসে।
চীন
চীন প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টন সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শ্রম ব্যয়ের কারণে চীনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
Leave a Reply