ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
এক কথায় বলা যায় মায়া জনসমাজের অর্থনীতি, বাণিজ্যের একটা নিজস্ব ঘরানা ছিল। বিশেষ করে মায়া-সভ্যতার প্রাচীন কাল থেকে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি মায়াদের কাছে খুবই কাম্য ছিল। কেননা ঐ সময়ে কৃষি ছাড়াও বাণিজ্য (Trade) ক্রমশ অর্থনীতির কাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে যুক্ত হচ্ছিল। অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যপথ প্রধানত নীচু অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।
এবং এই বাণিজ্যপথের দেওয়া-নেওয়া যেসব পণ্য থাকত তার মধ্যে ধাতু এবং পাথরের নানারকম মূল্যবান রত্ন থাকত। এইসব পাথর এবং ধাতব রত্নের মধ্যে ছিল ধাতু, হলুদ রং-এর পান্না জাতীয় রত্ন, কাকাও বা এক রকমের ফল, জন্তুদের চামড়া এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের নানা ধরনের পাখির পালক। এইসঙ্গে থাকত দামি দামি সখের মাটির পাত্র।
এইসঙ্গেই ক্লাসিক যুগের প্রথমদিকের একটি অঞ্চলের নাম করতে হয়। মধ্য মেক্সিকোর তেওতিহুয়াকান (Teotihuacan) মেসোআমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহর। শুধু বাণিজ্যকেন্দ্র নয় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সবটাই এই শহরের মাধ্যমে মেসোআমেরিকায় প্রকাশিত হত। শহরের এই ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব সমাজতাত্ত্বিক যেবারের তত্ত্বকে মনে করিয়ে দেয়। অর্থাৎ ধর্মীয় গুরুত্ব এক্ষেত্রে ব্যবসা, মূলধন-পুঁজির প্রসারে সাহায্য করেছিল।
স্বাভাবিকভাবে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা মানুষের আগমনকে সুনিশ্চিত করেছিল এবং নতুন অভিবাসন প্রক্রিয়ার ফলে কাজ, মজুরি, পেশা, জীবিকার এক শৃঙ্খলাবদ্ধ চক্র গড়ে (Chained circle) উঠেছিল। এই গড়ে ওঠা জীবিকা কাঠামোয় মায়ারা বেশি করে অংশগ্রহণ করেছিল। এই বাণিজ্যচক্রের অন্য একটি মাত্রাও গড়ে উঠেছিল।
(চলবে)
Leave a Reply