প্রদীপ কুমার মজুমদার
সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত বৈদিক সভ্যতাই ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনতম নিদর্শন বলে মনে করা হোত। বৈদিক যুগে জান-বিজ্ঞানের মোটামুটি উন্নতি হয়েছিল তার নিদর্শন বেদের বিভিন্ন অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই। গণিতের বিশেষ করে সংখ্যা সম্বন্ধীয় কিছু কিছু গণনা বৈদিক সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই গণনা বা গণিত সম্বন্ধীয় যা কিছু উদ্ধৃতি বা উল্লেখ সব কিছুই প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে। ফলে এ গুলিকে গণিত গ্রন্থ বলা যায় না।
ব্রাহ্মণ, সংহিতা, উপনিষদ, পুরাণ প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে গণন। বিজ্ঞানের আলোচনা কিছু কিছু রয়েছে। তবে সে গুলি অধিকাংশই প্রসঙ্গক্রমে উল্লিখিত হয়েছে। জৈন আগম গ্রন্থাদিতে গণিতের বহু তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। এদের মধ্যে তত্ত্বার্থাধিগম সূত্র, বৃহৎক্ষেত্র সমাস, স্থানাঙ্গ সূত্র প্রভৃতি গ্রন্থের নাম উল্লেখযোগ্য। বৌদ্ধ সাহিত্যের মধ্যে দীঘ নিকায়, বিনয় পিটক, মিলিন্দি পানহো প্রভৃতি গ্রন্থের নাম উল্লেখযোগ্য।
তবে এগুলির অধিকাংশই জৈন বা বৌদ্ধ দর্শনের অন্তর্গত নানা তত্ত্বের আলোচনায় পরিপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে গণিত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে শুনসূত্রে। ধরতে গেলে ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে প্রথম পদ্ধতিগতভাবে লিখিত গণিত গ্রন্থ হচ্ছে এই শুর সূত্র গ্রন্থগুলি। তবে এই গ্রন্থগুলি অধিকাংশই জ্যামিতি বিষয়ক। পঞ্চমশতাব্দীর শেষ পাদে গণিতের জন্য পৃথক গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয় এবং গণিত বলতে ঠিক যা বোঝায় তাই এই গ্রন্থগুলির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল।
ভারতবর্ষে গাণিতিক চিন্তার সূচনা কি করে হোল তা বলা কঠিন। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে প্রাচীন কালে বিভিন্ন দেশের গণিতচর্চার পদ্ধতির মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। এবং সেই বৈশিষ্ট্যের জোরেই তাঁরা তাঁদের গণিতচর্চার উন্নতি সাধন করেছিলেন। ব্যাবিলনবাসীরা জ্যোতির্বিদ্যাকে উন্নত করতে গিয়ে গণিতের ব্যাপক চর্চা করেছিলেন। কিন্তু ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এধরণের কোন ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে না।
(চলবে)
Leave a Reply