হার্শ ভি. পান্ট এবং কালপিত এ. মানকিকার
অক্টোবর মাসে চীন এবং ভারত তাদের দীর্ঘদিনের বিতর্কিত সীমান্তের একটি অংশে টহল দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। এই চুক্তি চার বছর ধরে চলা হিমালয়ের উচ্চ পর্বতে উত্তেজনা নিরসন করে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই চুক্তির ফলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আলোচনার সুযোগ পান।
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় একটি রক্তাক্ত সংঘর্ষে ডজনখানেক সৈন্য নিহত হয়, যা দুই এশীয় শক্তিধর দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীর সংকটে ফেলে। ভারতীয় জনসাধারণ চীনের আগ্রাসনের জন্য ক্ষোভে ফেটে পড়ে, এবং মোদি সরকার চীনের প্রতি প্রতিশোধ নিতে টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
তবে চীন ও ভারতের জন্য স্বাভাবিক সম্পর্ক বলতে কিছু নেই। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভারতের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কার্যক্রমকে সীমিত করে রেখেছে। সীমান্তের বহু স্পর্শকাতর পয়েন্ট শিরশিরে হয়ে রয়েছে, যা শি-এর আগ্রাসী নীতির কারণে যেকোনো সময় উত্তপ্ত হতে পারে। যদিও মোদি তার পূর্বসূরিদের চেয়ে চীনের সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ভারতের অর্থনীতি চীনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
চীনের সাথে ভারতের এই অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণে চীন তার প্রভাব খাটানোর সুযোগ পায়। তাই ভারতের উচিত চীনের হুমকিকে আরও গভীরভাবে বোঝা এবং তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য একটি মন্ত্রণালয় গঠন, যা চীনের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার স্কেল ও প্রভাব নির্ধারণ করবে এবং এই সম্পৃক্ততার ঝুঁকি থেকে ভারতকে রক্ষা করার উপায় খুঁজবে।
“চিনদিয়া” থেকে “ইন্ডিয়া ফার্স্ট”
১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা ভারতকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে এখনও বিরোধ চলছে। ১৯৮০-এর দশকে সম্পর্কের উষ্ণতা শুরু হলেও সীমান্ত সমস্যা সমাধান ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া হয়।
২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শাসনকালে “চিনদিয়া” ধারণা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার পর চীন আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং সীমান্তে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভারতের নিরাপত্তা নীতি রূপান্তরিত হয়।
উষ্ণ ও শীতল সম্পর্ক
তবে মোদির কড়া নিরাপত্তা নীতি চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটায় না। চীনকে নিরাপত্তার হুমকি এবং অর্থনৈতিক সুবিধা উভয় হিসেবে দেখার এই মনোভাব ভারতের চীন নীতির দুর্বলতা।
ভারতের নীতিনির্ধারকদের উচিত এই দ্বৈত মনোভাব দূর করা। নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে আলাদা রেখে চলা সম্ভব নয়। ভারতের উচিত উৎপাদন খাতের ওপর জোর দেওয়া এবং চীনের পণ্য ও প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমানো।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ভারতকে তার উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই সঙ্গে চীনের প্রযুক্তি ও পণ্যের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।
উপসংহার
ভারতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না। তবে মোদির সরকার যদি ব্যবসা ও জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় করতে পারে, তাহলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ভারত আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে। যদি তা না করা যায়, তবে ভারতের বৈশ্বিক ভূমিকার স্বপ্ন চীনের ছায়ায় চাপা পড়ে যাবে।
Leave a Reply