প্রদীপ কুমার মজুমদার
ভারতীয়দের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে যাগযজ্ঞ করা একটি অপরিহার্য কর্তব্য বলে স্বীকৃত ছিল। তাঁরা এই যাগযজ্ঞ করতে গিয়ে জ্যামিতি তথা গণিতের স্বপ্ন স্বপ্ন তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে ধীরে ধীরে গণিত চর্চার ভিত্তি রচিত হতে থাকে। গণিতের যে সব তত্ত্ব এই প্রসঙ্গে প্রয়োজন হোত তার নির্ভুলতা সম্পর্কে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
কারণ যজ্ঞবেদী যদি সঠিক না হয় তাহলে যজ্ঞকারী বা যজমানের অথবা উভয়েরই পাপ হবে স্মরণ রেখে যতদূর সম্ভব এগুলি নিখুঁতভাবে নির্মিত হোত। ফলে গণিতের যে সব তত্ত্বের প্রয়োগ এখানে করা হোত তা নির্ভুলই হোত। বহু পণ্ডিত মনে করেন যাগযজ্ঞ করতে গিয়ে যেটুকু গণিতচর্চার প্রয়োজন সেইটুকুই ভারতীয়রা করতেন, তার বেশী নয়। কিন্তু এ ধারণা ভ্রান্ত, কারণ ভারতীয়রা সর্বদাই গণিতকে পৃথক মর্যাদা দিয়ে এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ বেদাঙ্গ জ্যোতিষ থেকে একটি শ্লোক তুলে ধরা হলো:
“যথা শিখা ময়রাণাং নাগানাং মণয়ো যথা।
তদ্বদ্বেদাঙ্গ শাস্ত্রাণাং গণিতং মূর্খনি স্থিতম্।”
অর্থাৎ ময়ূরের শিখার মত, সাপের মাথার মণির মতো বেদাঙ্গ শাস্ত্রগুলির শীর্য দেশে গণিতের অবস্থিতি।
তাছাড়া জ্যোতিষের যে মূল্য ছিল সে কথাও কোথাও কোথাও উল্লিখিত আছে। জ্যোতিষের উপর গুরুত্ব দেওয়ার অর্থই গণিতকে মর্যাদা দেওয়া। মুণ্ডকোপনিষদের কোন এক জায়গায় শৌনিক ঋষি অঙ্গিরা ঋষিকে বললেন-“হে ভগবন্ কোন বস্তু সুবিদিত হইলে এই সমস্ত বিজ্ঞাত হয়।”
প্রত্যুত্তরে অব্দিরা বললেন-“দুটি বিঘ্না জানিবার আছে। একটি পরা অপরটি অপরবিদ্যা।” প্রসঙ্গ- ক্রমে বলা প্রয়োজন অপরাবিক্ষার অন্তর্গত হচ্ছে জ্যোতির্বিদ্যা। এই প্রসঙ্গে অন্বিরা বলেছেন-“তত্রাপরা ঋষেদো, যজুর্বেদঃ সামবেদহথবেদঃ শিক্ষা, কল্পো ব্যাকরণং ছন্দো জ্যোতিষিমিতি।””অর্থাৎ ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ, এ সবই অপরাবিক্ষা।
(চলবে)
Leave a Reply