সারাক্ষণ ডেস্ক
এই সপ্তাহে মন্ত্রিসভা, বোর্ডরুম এবং কূটনৈতিক মিশনগুলোতে একটি বিষয় প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দলের আমেরিকার নির্বাচনে বিস্তৃত বিজয় একজন অপ্রথাগত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন এবং কঠোর আলোচক প্রেসিডেন্টকে বিশাল ক্ষমতা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের প্রভাব বিশ্লেষণে বিশ্বজুড়ে সরকার ও ব্যবসায়িক নেতৃত্ব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আমেরিকা, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা প্রদান করে এবং বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র। এর অর্থনৈতিক কাঠামোয় সামান্য পরিবর্তনও বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প আমেরিকার অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভগুলো, যেমন বাণিজ্য, নিয়ন্ত্রণ এবং অভিবাসন, পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার নীতিমালা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান প্রবাহগুলোকে রূপান্তরিত করবে, যা কিছু ক্ষেত্রে বিজয়ী এবং অনেক ক্ষেত্রে পরাজয়ী তৈরি করবে।
বাণিজ্যের প্রবাহে প্রভাব
ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে সন্দেহপ্রবণ। তিনি একটি সার্বজনীন প্রোটেকশনিস্ট প্রাচীর নির্মাণের পক্ষে, যা আমদানি পণ্যের ওপর ১০-২০% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়। যদিও এই প্রস্তাব পুরোপুরি বাস্তবায়িত নাও হতে পারে, এর আংশিক বাস্তবায়নও আমেরিকার শুল্ক কাঠামোতে ১৯৩০ সালের পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনবে।
ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ৬০% শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা চীনের জিডিপি-তে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। মেক্সিকোর জন্যও তিনি কঠোর শুল্কের পরিকল্পনা করেছেন, যা দেশের জিডিপির ২৭% সরাসরি আমেরিকার সাথে যুক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ নতুন শুল্ক ইউরোপের জিডিপি ০.৫% কমিয়ে দিতে পারে।
পুঁজির পুনর্বণ্টন
ট্রাম্পের ট্যাক্স ছাড় এবং নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব আমেরিকান কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আমেরিকান ডলার ইতোমধ্যেই শক্তিশালী হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই অবস্থান অন্যান্য অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, বিশেষত উদীয়মান বাজারগুলোর জন্য।
অভিবাসনে পরিবর্তন
ট্রাম্প বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের পরিকল্পনা করেছেন। এটি মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি উচ্চ দক্ষ শ্রমিকদের জন্য অভিবাসন নীতি পুনর্বিবেচনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা আমেরিকার বাইরে অন্য দেশগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য জোট
ট্রাম্পের নীতিমালা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নানা স্বার্থ জড়িত, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দেশ তার নীতির বিরোধিতা না করে শুল্ক এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করছে। তবে কিছু দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মশাল জ্বালিয়ে রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
এই পরিবর্তনগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। কিছু দেশ এই পরিস্থিতি থেকে লাভবান হতে পারে, তবে অনেক দেশকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।
Leave a Reply