প্রদীপ কুমার মজুমদার
জৈনধর্মের প্রাবল্যের সময় জৈনরা গণিতকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছিলেন। তাঁদের শাস্ত্র মোটামুটি চারটি ভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে গণিতানুযোগে একটি বিশেষ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে সংখ্যা সম্বন্ধীয় আলোচনাই বেশী করা হয়েছে। বৌদ্ধরাও গণিতকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের গ্রন্থ বিনয় পিটক, মজহিম নিকায়, কুল্ল নিন্দেশ প্রভৃতিতে গণনা, সাংখ্যায়ণ, মুদ্রা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করেছেন।
যাইহোক আমর। লক্ষ্য করলাম বৈদিক সাহিত্যের মধ্যে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভাবে গণিতের উল্লেখ রয়েছে। মহেজোদারো ও হরপ্পার প্রত্নতত্ত্বীয় আবিষ্কারের পূর্বে
আমাদের গণিতচর্চার আর কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য হস্তগত হয় নাই। মহেজোদারো ও হরপ্পার প্রত্নতত্ত্বীয় আবিষ্কারের ফলে জানা গিয়েছে-তখনকার দিনে ভারতীয়রা পড়তে পারতেন, লিখতে পারতেন এবং গণিত চর্চাও করতেন।
তার কারণ এখানে বিভিন্ন মাপের বাটখারা এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের দাগকাটা পাত্র পাওয়া গিয়াছে। এই বাটখারাগুলি ঘনকাকৃতি এবং নিখুঁতভাবে তৈরী। পরিমাপের জন্য এ ব্যবস্থা দেখে মনে হয় গণিতজ্ঞান তখনকার দিনে সিন্ধু উপত্যকাবাসীদের ছিল। সিন্ধু উপত্যকায় খননকার্যের ফলে যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে সেগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পরীক্ষা করে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে-৩৫০০ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ হয়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি ভারতবর্ষে গণিতজ্ঞানের সূচনা যত আগে থেকেই শুরু হোক না কেন ৩৫০০ গ্রীষ্টপূর্বাব্দে এ জ্ঞানের কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। ফলে ভারতীয় গণিত অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রাচীনত্বের দাবী করতে পারে কিনা সন্দেহ থাকলেও মিশর ব্যাবিলন বা চীনের থেকে পিছিয়ে ছিল না।
(চলবে)
Leave a Reply