সারাক্ষণ ডেস্ক
বিশ্ব সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত স্মরণ দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, নিয়ম মেনে সচেতন হয়ে সড়কে চলাচল করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। নিরাপদে পথ চলার জন্য সড়কের নিয়ম সম্পর্কে জানা এবং তা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্র্যাকের পক্ষ থেকে দিবসটি উদযাপন করা হয়। ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদ্যোগে রবিবার, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ফরিদপুরে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের তিন হাজার শাখা কার্যালয়ে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী, নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য এবং মানবিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক মোঃ আকরামুল ইসলাম এবং মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মোঃ বেলায়েত হোসেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন।
বিআরটিএ-এর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত চালকের ঘাটতি রয়েছে। এর পাশাপাশি গাড়ি চালকদের পেশাটি এখনও একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে গড়ে উঠেনি। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে এটিও একটি অন্যতম কারণ। মোটরসেইকেলকে একটি ভারসাম্যহিীন ঝুঁকিপূর্ণ বাহন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কেবল মাত্র কাছাকাছি দূরত্বে চলাচলের উপেযোগী, দূরপাল্লার বাহন নয়।
নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একটি জঙ্গলে যদি বাঘ থাকে, তাহলে আমরা অনেক সাবধানে সেখানে চলাচল করি। সড়কও এমন বিপজ্জনক স্থান, যেখানে প্রতিটি যানের ক্ষেত্রে আমাদের সাবধানতা মেনে চলা জরুরি। নিজের জীবন নিজেকেই বাঁচাতে হবে। সকলের চিন্তা চেতনায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি না নিয়ে আসলে দুর্ঘটনা কমবে না।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য এবং মানবিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক মোঃ আকরামুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে যান, তাদের অনেকে সারা জীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকেন, অনেকে স্বাস্থ্যগত এবং মানসিক সমস্যা নিয়ে জীবনযাপনে বাধ্য হন। ব্র্যাক বরাবরই নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে যেসব বার্তা দেয়া হয়, সকল কর্মীর তা মেনে চলা জরুরি।
ব্র্যাকের প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন বলেন, চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর যতো মৃত্যু হয় তার ২২ শতাংশই হয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। সরকারের সড়ক নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রস্তুত কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ব্র্যাক এই আইনটি প্রস্তুত করতে সহায়তা করছে বলে জানান তিনি।
ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। দুর্ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছে, শুধু তারাই অনুভব করতে পারে এই ক্ষতি কতোটা অপূরনীয়। ব্র্যাকের একজন সদস্যও যেন এই ক্ষতির মুখোমুখি না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের ১৭ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রাজবাড়ীতে অবস্থিত ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলের প্রশিক্ষণার্থী ১২ জন নারী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ ছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, সারা দেশে ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচির কর্মীরা অনলাইনে এই আলোচনায় যোগ দেন।
উল্লেখ্য, সকল ধরনের ব্যবহারকারীর জন্য সড়কগুলোকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রাম ২০০১ সাল থেকে কাজ করে চলেছে। এসব কার্যক্রমের একটি বড় অংশ নিরাপদ সড়ক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান। এ উদ্দেশে এখন পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি সাধারণ সড়ক ব্যবহারকারী, ৫ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৫ হাজার ৪ শত শিক্ষককে নিরাপদ সড়ক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রাম ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল পরিচালনা করছে। এই স্কুলে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৫ শত ৩৫ জন বাণিজ্যিক গাড়িচালনা, ৮ হাজার ১ শত ৪৭ জনকে বুনিয়াদি গাড়ি চালনা, ২ হাজার ৬ শত ৯৮ জন নারীকে গাড়িচালনা, ২ হাজার ১৩ জনকে মোটরসাইকেল চালনা এবং ৩৮৪ জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের তিন হাজার শাখা কার্যালয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় শাখা কার্যালয়গুলোতে দুর্ঘটনায় নিহত কর্মীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় এবং ব্র্যাক কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি মাঠকর্মীদের জন্য নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ড যেমন নারীদের স্কুটি চালানো প্রশিক্ষণ, মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন এবং পুরুষকর্মীদের ডিফেন্সিভ মোটরসাইকেল রাইডিং প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
Leave a Reply