রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

ইন্টারনেটের সূচনা: দুটি অক্ষরে ইতিহাস

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ২.৩০ পিএম

স্কট নোভার

১৯৬৯ সালের ২৯ অক্টোবর, দুই বিজ্ঞানী ৩৫০ মাইল দূরের দুটি কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন এবং একটি বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করেন। বার্তাটি মাঝপথে ভেঙে যায়। ৫৫ বছর পর, বিবিসি সেই ঐতিহাসিক দিনের দুই মুখ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছে।

শীতল যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, চার্লি ক্লাইন এবং বিল ডুভাল নামে দুই উদ্যমী প্রকৌশলী একটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছিলেন। এটি ছিল আডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি নেটওয়ার্ক (আর্পানেট), যা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অর্থায়নে তৈরি হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল টেলিফোন লাইনের উপর নির্ভর না করে ডেটা শেয়ারের জন্য একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

একটি ত্রুটিপূর্ণ শুরু

ইউসিএলএ-র ছাত্র চার্লি ক্লাইন যখন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিল ডুভালের সঙ্গে সংযোগ করার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি শব্দ টাইপ করা: “লগইন”। কিন্তু, ক্লাইন মাত্র “এল-ও” টাইপ করার পরই ডুভাল তাকে ফোনে জানান, তাদের সিস্টেম ক্র্যাশ করেছে। এই ত্রুটিপূর্ণ শুরুর মধ্য দিয়েই ইন্টারনেটের প্রথম বার্তা ছিল মাত্র দুটি অক্ষর: “এল-ও”।

প্রযুক্তির সূচনা

আর্পানেট যে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করত, সেগুলো ছিল তৎকালীন সময়ের তুলনায় ছোট, কিন্তু বর্তমানের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন। এই কম্পিউটারগুলো মূলত রেফ্রিজারেটরের আকারের ছিল এবং কয়েক হাজার বা লক্ষ গুণ কম শক্তিশালী ছিল বর্তমানের স্মার্টওয়াচ প্রসেসরের তুলনায়।

বার্তা পাঠানোর অভিজ্ঞতা

ক্লাইন বর্ণনা করেন যে, কীভাবে তিনি তার টার্মিনাল থেকে একটি অক্ষর টাইপ করলে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডুভালের কাছে পৌঁছাত এবং পরে তা আবার তার কাছে ফেরত আসত। কিন্তু দ্রুত ডেটা সংযোগের জন্য তাদের সিস্টেম প্রস্তুত ছিল না, যার ফলে সিস্টেমটি ভেঙে পড়ে।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য

ক্লাইন এবং ডুভাল স্বীকার করেন যে, তারা তখন এই ঘটনাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। তারা এটি একটি সাধারণ পরীক্ষা হিসেবে দেখেছিলেন, যা একটি বড় কাজের অংশ ছিল।

পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ

ক্লাইন এবং ডুভাল বলেন, আর্পানেটের মাধ্যমে যে ধারণাগুলো তৈরি হয়েছিল, তা ইন্টারনেটের আজকের কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছে। তবে, তারা বর্তমান ইন্টারনেটের ওপর বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলোর প্রভাব এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

শিক্ষা ও সতর্কতা

ডুভাল এআই এবং ইন্টারনেটের মধ্যে গভীর সংযোগ নিয়ে সতর্ক করেছেন এবং বলেন, এআই-এর সম্ভাব্য বিপদ এখনই স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, ক্লাইন বলেন, ইন্টারনেটের কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এমন একটি ছোট বার্তা “এল-ও” দিয়ে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ এটি বিশ্বব্যাপী জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু, এর সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি দুটিকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024