বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

স্যার সাইদের সংগ্রামের গল্প

  • Update Time : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ৩.১৬ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক 

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সাইদ আহমদ একজন মুসলিম পণ্ডিত ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত এমএও কলেজ (যা পরবর্তীতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় বা এএমইউ হয়) গড়ে তোলার জন্য তহবিল সংগ্রহে তার অসামান্য প্রচেষ্টার উল্লেখ রয়েছে একটি বইয়ের অধ্যায়ে।

বইটিতে বলা হয়েছে, “স্যার সাইদ তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করেছিলেন। তিনি দাতা, লটারি, এবং বই ও ছবির বিক্রির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এমনকি আলিগড় প্রদর্শনীতে বই বিক্রির জন্য একটি স্টল চালু করেছিলেন এবং কখনো কখনো ভিক্ষুকের থলি নিয়ে ভিক্ষাও করেছিলেন।”

অবসরপ্রাপ্ত এএমইউ অধ্যাপক ও উর্দু একাডেমির প্রাক্তন পরিচালক রাহাত আবরার বলেন, স্যার সাইদ তার পুরো জীবন মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। “তিনি জনগণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন, সরকারের কাছে নয়। ১৮৭৫ সালে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে যারা ২৫ টাকা দান করবেন তাদের নাম মাদ্রাসাতুল উলুমের সীমানা প্রাচীরে লেখা হবে। একইভাবে, ৩০০ টাকা দানকারীদের নাম ক্লাসরুম বা হোস্টেলের দেয়ালে এবং ৫০০ টাকা দানকারীদের নাম সেন্ট্রাল হলে লেখা হবে। আজও এএমইউর সীমানা প্রাচীরে ২৮৫টি নাম খোদাই করা আছে,” বলেন অধ্যাপক আবরার।

১৮৯১ সালে, স্যার সাইদ হায়দরাবাদের ষষ্ঠ নিজাম মীর মাহবুব আলী খানকে একটি চিত্রকর্ম উপহার দেন। অধ্যাপক আবরার জানান, “নিজাম সেই চিত্রকর্মটি বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে কিনে নেন এবং সেই অর্থ কলেজের নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।”

স্যার সাইদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, তহবিল সংগ্রহের সময় তিনি পৃষ্ঠপোষকদের দেয়া ভোজ গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। “তিনি বলতেন, তাকে খাওয়ানোর পরিবর্তে সেই অর্থ এমএও কলেজে দান করা হোক,” বলেন অধ্যাপক আবরার।

এএমইউর ২০২০ সালের একটি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে স্যার সাইদ যে অর্থ ব্যয় করতেন, সেটিও তিনি কলেজের তহবিলে দান করতেন। তার পুত্র বিচারপতি সায়্যিদ মাহমুদের বিবাহ অনুষ্ঠানে ওয়ালিমার জন্য কোনো পার্টি না দিয়ে তিনি ৫০০ টাকা কলেজ তহবিলে দান করেছিলেন।

স্যার সাইদের পুত্র বিচারপতি সায়্যিদ মাহমুদ ইংল্যান্ডে আইন পড়েছিলেন এবং মুসলিম শিক্ষার উন্নয়নে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের (বর্তমান এলাহাবাদ হাইকোর্ট) আদালতে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৮৯৮ সালে স্যার সাইদের মৃত্যুর পর একটি তহবিল, “স্যার সাইদ তহবিল,” শুরু করা হয়। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ সরকার এমএও কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার জন্য ৩০ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আগা খানের নেতৃত্বে আলিগড় আন্দোলনের অধীনে একটি কমিটি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ চালিয়ে যায়। অধ্যাপক আবরার বলেন, “যদিও বেশিরভাগ অর্থ মুসলিম সম্প্রদায় থেকে এসেছিল, তবে অনেক হিন্দু শাসকও এই মহৎ কাজে দান করেছিলেন। আজও তাদের নাম এএমইউ প্রাঙ্গণে খোদাই করা আছে।”

এই অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে ১৯২০ সালে এএমইউ অ্যাক্টের মাধ্যমে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024