শ্রী নিখিলনাথ রায়
মহম্মদ রেজা খাঁর বিরুদ্ধে নন্দকুমারকে নিযুক্ত করিবার আর একটি কারণ ছিল বলিয়া হেষ্টিংস প্রকাশ করিয়াছিলেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, রেজা খাঁ মুসলমানসমাজের যেরূপ নেতা, নন্দকুমারও হিন্দুসমাজের সেইরূপ নেতা ছিলেন। উভয়েই ক্ষমতাবৃত্তির জন্য পরস্পরের প্রতিদ্বন্দী হইয়া উঠেন। হেষ্টিংস উভয়কেই মনে মনে ভয় করিতেন। এই জন্য তিনি “কণ্টকেনৈব কণ্টকং” নীতির অনুসরণে নন্দকুমারের দ্বারা রেজা খাঁর অধঃপতন ঘটাইতে ইচ্ছা করেন। এ কথা তিনি নিজেই প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।
অবশ্য ইহাতে হেষ্টিংসের কূটবুদ্ধির প্রশংসা করা যাইতে পারে বটে, কিন্তু তাঁহার প্রবৃত্তিও কিরূপ ছিল, ইহা হইতে তাহাও বুঝা যায়। নন্দকুমার রেজা খাঁর বিচারের জন্য যথেষ্ট যত্ন করিলেন। কিন্তু রেজা * খাঁ এদিকে তলে তলে হেষ্টিংস সাহেবকে বশীভূত করিয়া ফেলিলেন। যাহার নিকট হইতে হেষ্টিংস অর্থের প্রলোভন পাইতেন, সে সহস্র দোষী হইলেও, তিনি অম্লানবদনে তাহাকে অব্যাহতি দিতেন। প্রায় দুই বৎসর বিচারের পর রেজা খাঁ নিষ্কৃতি লাভ করিলেন।
রেজা খাঁর বিচারের প্রথমে হেষ্টিংস নন্দকুমারের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন; এমন কি, তাঁহার সমস্ত অনুরোধ রক্ষা করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। এস্থলে দুই একটির উল্লেখ করা যাইতেছে। হেষ্টিংস গবর্ণর হইয়া আসিলে, নবাব মোবারক উদ্দৌলার অভিভাবক ও দেওয়ান নিযুক্ত করিবার ভার তাঁহার প্রতি অর্পিত হয়। তিনি মণিবেগমের নিকট হইতে অনেক টাকা উৎকোচ গ্রহণ করিয়া, মোবারক উদ্দৌলার স্বীয় জননীর দাবী অগ্রাহ করিয়া বিমাতা মণিবেগমকেই অভিভাবক ও নন্দকুমারের পুত্র গুরুদাসকে দেওয়ান নিযুক্ত করেন।
কিন্তু সে নিয়োগ যে কেবল নন্দকুমারের অনু- রোধেই হইয়াছিল, এমন নহে; তজ্জন্য নন্দকুমারের নিকট হইতে তিনি যথেষ্ট নজরও আদায় করিয়াছিলেন। আমরা যথাস্থানে তাহার উল্লেখ করিব। গুরুদাসের নিয়োগসম্বন্ধে গ্রেহাম, ডেক্রে, মরেল প্রভৃতি কাউন্সিলের সভ্যেরা আপত্তি করিয়াছিলেন। তাঁহাদের প্রধান আপত্তি এই ছিল যে, গুরুদাসের নিয়োগে নন্দকুমারেরই প্রভুত্ব থাকিবে। নন্দকুমার কোম্পানীর বিরুদ্ধে শাহজাদা ও ফরাসীদিগের সহিত চক্রান্ত করিয়াছেন, তাঁহার ক্ষমতাবৃদ্ধি হইতে দেওয়া কদাচ উচিত নহে। হেষ্টিংস সে কথা না শুনিয়া গুরুদাসকেই নিযুক্ত করেন।
Leave a Reply