শ্রী নিখিলনাথ রায়
ইহার পর হইতে দেশমধ্যে হেষ্টিংস সাহেবের অত্যাচার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। উৎকোচ প্রদানে জমিদার ও প্রজাসাধারণে অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল। গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ, কান্তবাবু, দেবীসিংহ প্রভৃতি দেশীয় প্রাতঃস্মরণীয় (?) ব্যক্তিগণ হেষ্টিংসের অনুচর হইয়া উঠিলেন। নবকৃষ্ণ, রেজা খাঁ প্রভৃতিও তাহাতে যোগ দিলেন। নন্দকুমার দেশের অবস্থা দেখিয়া অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত হইলেন। কিন্তু এক্ষণে তিনি একরূপ ক্ষমতা- হীন; কি করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না।
কি জমিদার কি প্রজা সকলে আসিয়া তাঁহার নিকট আপনাদিগের প্রতি অত্যাচার এবং স্বস্ব মনোবেদনার কথা জানাইতে আরম্ভ করিলেন। শুনিয়া সেই পরদুঃখ কাতর স্বদেশভক্তের প্রাণে আঘাত লাগিল। তিনি যথাসাধ্য তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা দিয়া স্বীয় ক্ষমতাহীনতার কথা জানাইতে লাগিলেন; কিন্তু কেহই তাঁহার আশ্রয় পরিত্যাগ করিতে চাহিল না। নাটোর, বর্দ্ধমান প্রভৃতি বাঙ্গলার শীর্ষস্থানীয় জমিদারবৃন্দ হেষ্টিংস ও তাঁহার অনুচরবর্গের ভীষণ অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত হইয়া তাঁহার শরণাগত হইলেন।
তিনি তাঁহাদিগের কি উপায় করিবেন, ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলেন না। নন্দ কুমারের নিকট সাধারণের গমনাগমনে এবং তাঁহার নিকট অত্যাচার- কাহিনীর প্রচারে, হেষ্টিংস ও তাঁহার অনুচরবর্গ ক্রমে নন্দকুমারের প্রতি অসন্তুষ্ট হইতে লাগিলেন। এইরূপে উভয় পক্ষের মধ্যে ঘোরতর বিরক্তির সঞ্চার হইল। হেষ্টিংস নন্দকুমারের প্রতি যেটুকু সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, তাহা একেবারে ভুলিয়া গিয়া পুনর্ব্বার নিজ মূর্ত্তি ধারণ করিলেন। নন্দকুমারও তাঁহার অত্যাচারের প্রতিবিধানের জন্য চিন্তা করিতে লাগিলেন। সহসা তাঁহার একটি সুযোগ উপস্থিত হইল।
আমরা যথাক্রমে তাহার নির্দেশ করিতেছি। পলাশী-যুদ্ধের পর হইতে যখন বঙ্গরাজ্যে ইংরেজদিগের ক্ষমতা বদ্ধমূল হইতে আরব্ধ হয়, তদবধি দেশমধ্যে কোম্পানীর কর্মচারিগণের অযথা প্রভুত্ব ও অত্যাচার দিন দিন বর্দ্ধিত হইতে থাকে। এই সমস্ত অত্যাচারের কথা ইংলণ্ডে পৌঁছিলে, মহানুভব ব্রিটিশজাতির হৃদয়ে অত্যন্ত আঘাত লাগে। তাঁহারা নিরীহ ভারতবাসিগণের প্রতি অত্যাচার নিবারণের জড় কৃতপক্ষর হন। পালিয়ামেন্ট সভা সেই সমস্ত বিষয়ের অনুসন্ধানের জন্য ১৭৭২ খৃঃ অব্দে গুপ্তসমিতি নামে এক সভার প্রতিষ্ঠা করিলেন।
Leave a Reply