শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহার পর মণিবেগম ও গুরুদাস প্রভৃতির নিয়োগের জন্য নন্দকুমার যে সমস্ত টাকা আপনাদিগের কর্মচারী ও হেষ্টিংসের কর্মচারী কান্তবাবুর ভ্রাতা নৃসিংহপ্রভৃতির দ্বারা প্রেরণ করেন, তাহারও একটি তালিকা দিয়াছিলেন। তাহাতে প্রথম দফায় ৭৪০০৪, দ্বিতীয় দফায় ২৫৯৯৮৫০, তৃতীয় দফায় ৩১০২৪০, চতুর্থ দফায় ১০০০, পঞ্চম দফায় ১ লক্ষ, ৬৯ দফায় ৪০ লক্ষ টাকা, মোট ৩৫৪১০৫ টাকা কোন কোন্ তারিখে কিভাবে দেওয়া হয়, সমস্তই উল্লিখিত হয়। নন্দকুমারের পত্র কাউন্সিলে পঠিত হইলে হেষ্টিংস সাহেব ফ্রান্সিসকে বলেন যে, আমি কৌতূহলবশতঃ জিজ্ঞাসা করিতেছি, আপনি নন্দকুমারের এই অভিযোগের কথা পূর্ব্বে জানিতেন কি না?
ফ্রান্সিস উত্তর দেন যে, আমি ব্যক্তিবিশেষের কৌতূহল নিবারণের জর উত্তর দিতে বাধ্য নহি। তবে গবর্ণরকে বলিতে পারি, আমি তাহার বিষয় বাস্তবিক কিছুই জানিতাম না। সে দিবস অন্তান্ত কার্য্যের পর সভা ভঙ্গ হয়। কিন্তু সেই দিন হইতে হেষ্টিংস নন্দকুমারের অনিষ্টসাধনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন।
১৩ই মার্চ পুনর্ব্বার কাউন্সিলের অধিবেশন হয়। নন্দকুমার সে দিবসও পুনর্ব্বার আর এক পত্র লেখেন। তাহাতে তিনি পূর্ব্ব অভিযোগের কোন বিষয়ের পরিবর্তন করিতে ইচ্ছুক নহেন বলিয়া উল্লেখ করেন এবং স্বয়ং উপস্থিত হইয়া সমস্ত প্রমাণ করিতে স্বীকৃত হন। তিনি এইরূপ লেখেন যে, তিনি পূর্ব্ব গবর্ণরদিগকে স্বার্থশূন্য হইয়া কোম্পানীর রাজস্ব- বৃদ্ধি ও দেশের শ্রীবৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন। হেষ্টিংস প্রথমে তাহাই করেন, কিন্তু অবশেষে আর সেকথা গ্রাহ্য করিতেন না। যাহাতে তাঁহার পত্রদ্বয়ের বিষয় বিবেচনা করিয়া কোম্পানীর ও প্রজাবর্গের সুখবৃদ্ধি হয়, তাহারই জন্য তিনি প্রধানতঃ অনুরোধ করিয়াছিলেন।
নন্দকুমারকে সভাস্থলে উপস্থিত হইবার জন্য মন্দন সাহেব প্রস্তাব করিলে, গবর্ণর ও বারওয়েল অত্যন্ত তর্কবিতর্ক উপস্থিত করেন। তাঁহারা এইরূপ বলেন যে, কাউন্সিলের সভ্যত্রয় নন্দকুমারের নাম দিয়া নিজেরাই সমস্ত কার্য্য করিয়াছেন; নন্দকুমারের উপস্থিতি গবর্ণর প্রাণাস্তেও সহ্য করিতে পারিবেন না। যখন সভ্যেরা তাঁহাদের কথায় কর্ণপাত না করিয়া, নন্দকুমারকে আহ্বান করিবার জন্য বোর্ডের সেক্রেটারীকে আদেশ দিলেন, তখন হেষ্টিংস সাহেব সভাভঙ্গের প্রস্তাব করিয়া ক্রোধভরে সভাগৃহ পরিত্যাগ করিলেন এবং তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ বারওয়েলও প্রস্থান করিলেন।
Leave a Reply