রাজীব জয়দেবন
১৩ নভেম্বর ২০২৪-এ চেন্নাইয়ের একটি সরকারি হাসপাতালে এক ডাক্তার তার দায়িত্ব পালনকালে বারবার ছুরিকাঘাতে আহত হন। এর ঠিক তিন মাস আগে কলকাতায় এক তরুণ ডাক্তারের নির্মম ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এই ঘটনাগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে সহিংসতার একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং উদ্বেগজনক সমস্যাকে প্রকাশ করে।
ভারতজুড়ে ডাক্তাররা কর্মস্থলে সহিংসতাকে একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫% এরও বেশি ডাক্তার কর্মস্থলে সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং প্রায় ৬৩% ডাক্তার নির্ভয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারেন না। অন্য একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ৭০% ডাক্তার কর্মস্থলে সহিংসতার সম্মুখীন হন। অনেক ঘটনাই মৌখিক গালাগাল ও শারীরিক আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এগুলোর একটি ক্ষুদ্র অংশই আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে আইএমএ কেরালা স্টেট ৩,৮৮৫ জন ডাক্তারের উপর একটি বৃহৎ সমীক্ষা পরিচালনা করে। এই গবেষণাটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতিগুলো তুলে ধরে।
গভীর সিস্টেমগত সমস্যা
স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে সহিংসতা গভীর সিস্টেমগত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে সহিংসতা সাধারণত তখনই বৃদ্ধি পায়, যখন বিভিন্ন ঝুঁকির উপাদান একত্রিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের ভিড়, পর্যাপ্ত স্টাফের অভাব, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি, রোগীর সেবার অপর্যাপ্ততা (বাস্তব বা ধারণাগত), যোগাযোগের বিভ্রাট, ব্যয় বৃদ্ধি, অভিযোগ নিষ্পত্তির অনুপস্থিতি এবং মাদক বা অ্যালকোহলের প্রভাবে থাকা ব্যক্তিদের উপস্থিতি।
কিছু হাসপাতালে অনভিজ্ঞ ডাক্তারদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়, যেমন দুর্ঘটনা বিভাগ এবং আইসিইউতে, রাতের শিফটে একা পোস্ট করা হয়। এই সময়ে সিনিয়র সহায়তার অনুপস্থিতি পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলে।
আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাতের শিফটে কর্মরত ডাক্তারদের অর্ধেকেরও কমের জন্য ডিউটি রুম ছিল, এবং তাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ রুমে শৌচাগার সংযুক্ত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে ডিউটি রুম ওয়ার্ড বা জরুরি বিভাগের থেকে দূরে অবস্থিত ছিল, যা ডাক্তারদের অন্ধকার করিডোর ও অনিরাপদ স্থানে হাঁটতে বাধ্য করত।
নারী ডাক্তাররা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে তারা রাতের বেলা খালি ওয়ার্ডের বিছানায় ঘুমাতেন। এক ডাক্তার তার হ্যান্ডব্যাগে ফোল্ডেবল ছুরি এবং মরিচের গুঁড়া রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রায়শই অনুপস্থিত বা অপর্যাপ্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সামান্য বিনিয়োগে কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতার ঘটনা হ্রাস পেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং রোগীর পরিচর্যার এলাকায় সীমিত দর্শনার্থীর অনুমতি নিশ্চিত করলে সহিংসতার আশঙ্কা কমবে।
আইন প্রণয়ন একা কার্যকর নয়, যদি বাস্তবায়ন এবং গ্রাউন্ড পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেরালা ২০১২ সালে হাসপাতাল সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে, যা ২০২৩ সালে আপডেট করা হয়। তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি।
সেরা প্রশিক্ষিত ডাক্তাররাও ভিড়যুক্ত এবং অপর্যাপ্ত সম্পদের পরিবেশে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেন না। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা মোকাবিলায় হাসপাতাল প্রশাসক এবং নীতিনির্ধারকদের অবিলম্বে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
(রাজীব জয়দেবন কেরালা স্টেট আইএমএর রিসার্চ সেলের চেয়ারম্যান এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক)
Leave a Reply